উন্নত জীবন আর সুযোগ-সুবিধার সন্ধানে অনেকেই চান একটি উন্নত দেশের নাগরিকত্ব লাভ করতে। বিশেষ করে যেখানে জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, তেমন কিছু দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা থাকে প্রায় সকলেরই। সাধারণত উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ তুলনামূলকভাবে সহজ নীতি অনুসরণ করে থাকে নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়।
নাগরিকত্বের মূল ভিত্তি: চারটি অপরিহার্য শর্ত
বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রদান করে থাকে। তবে সাধারণভাবে নিম্নলিখিত চারটি বিষয় এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়:
১. বংশানুক্রম ও জন্মস্থান: ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা প্রায়শই এই ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা লাভ করেন। এছাড়াও শক্তিশালী পাসপোর্টধারী দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে।
২. স্থায়ী বসবাসের সময়কাল: বেশিরভাগ দেশেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পূর্বে কমপক্ষে পাঁচ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করার নিয়ম রয়েছে। তবে কিছু ব্যতিক্রমও দেখা যায়, যেখানে দুই বছর বসবাসের পরেই আবেদন করা সম্ভব।
৩. আর্থিক সক্ষমতা ও বিনিয়োগ: কিছু দেশ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ দিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে সহজেই এই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
৪. বৈবাহিক সম্পর্ক: যদি কোনো ব্যক্তি সেই দেশের কোনো নাগরিককে বিয়ে করেন, তবে নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যায়।
সহজে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সম্ভাবনাময় কিছু দেশ:
কানাডা: স্বপ্নিল জীবনের হাতছানিতে কানাডা অনেকের কাছেই প্রথম পছন্দ। এখানে তুলনামূলক সহজ শর্তে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট ১২টি সেক্টরে কাজের সুযোগের পাশাপাশি, পাঁচ বছর বসবাসের পর (যার মধ্যে কমপক্ষে ১,০৯৫ দিন সরাসরি উপস্থিতি বাধ্যতামূলক) নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। এছাড়াও, পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছরের আয়কর দাখিল, ইংরেজি অথবা ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতা এবং কানাডার ইতিহাস, মূল্যবোধ ও অধিকার সম্পর্কিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতে হলে প্রথমে কমপক্ষে পাঁচ বছর গ্রিন কার্ডধারী হিসেবে বসবাস করতে হয়। তবে কোনো মার্কিন নাগরিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কমপক্ষে তিন বছর একত্রে বসবাস করলে দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকে।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নীতি বেশ উদার। এখানে নাগরিকত্বের জন্য একটানা এক বছর বসবাস এবং একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যক।
আয়ারল্যান্ড: সবুজ প্রকৃতির দেশ আয়ারল্যান্ডে একটানা এক বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে নাগরিকত্ব পাওয়া আরও সহজ হয়।
সিঙ্গাপুর: ব্যবসা, চাকরি অথবা সিঙ্গাপুরের কোনো নাগরিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে, মাত্র দুই বছর স্থায়ীভাবে বসবাসের পরেই সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা সম্ভব। তবে সিঙ্গাপুর দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না।
মেক্সিকো: সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশেলে মেক্সিকোতে পাঁচ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। তবে মেক্সিকান বংশোদ্ভূত, মেক্সিকান সন্তান অথবা কোনো মেক্সিকান নাগরিককে বিয়ে করে দুই বছর সংসার করলে দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সমাজসেবা, বিজ্ঞান অথবা শিল্পে বিশেষ অবদান রাখলেও নাগরিকত্ব লাভ সহজ হয়। তবে স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষতা এক্ষেত্রে অপরিহার্য।
আর্জেন্টিনা: দক্ষিণ আমেরিকার এই সুন্দর দেশে নাগরিকত্ব পেতে হলে মাসিক কমপক্ষে ১,০০০ মার্কিন ডলার আয়ের প্রমাণ দেখাতে হয়। এই শর্ত পূরণ হলে মাত্র দুই বছর বসবাসের পরেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা সম্ভব।
পেরু: পেরুতে পড়াশোনা অথবা ব্যবসা শুরু করলে দুই বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
ব্রাজিল: ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের নাগরিকত্ব পেতে হলে সেখানে চার বছর বসবাস করতে হয়। পাশাপাশি আবেদনকারীর পর্তুগিজ ভাষায় সাবলীল দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নমনীয় নীতি অনুসরণ করে থাকে। তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব অভিবাসন আইন ও শর্তাবলী রয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করলে সহজেই একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post