ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাস, ট্রেন ও বিমানের টিকেট এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় অনলাইন টিকিটিংয়ের সুবিধা যুক্ত হওয়ায় টিকেট কেনা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে ঈদের টিকেট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
এখন আর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবহনের টিকেট বুকিংয়ের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। স্থল, রেল কিংবা আকাশপথে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টিকেট ঘরে বসেই কেনা যাচ্ছে। বাস ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে অনলাইনে টিকেট বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ পরিবহন প্রতিষ্ঠানের মোট টিকেট বিক্রির প্রায় ৫০ শতাংশই এখন অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে।
অনলাইন টিকেট বিক্রির অন্যতম প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকম কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি বছর তারা অনলাইনে ১০ লক্ষের বেশি টিকেট বিক্রি করে। তাদের মোট টিকিট বিক্রির প্রায় ৭০ শতাংশই অনলাইনে হয়। গত ঈদে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি টিকেট বিক্রি হয়েছিল এবং এ বছর তারা ২ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি টিকেট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সহজ ডটকম থেকে প্রায় ১২০টি বাস অপারেটরের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।
সোহাগ পরিবহনের টিকেট বিক্রিও বেশ ভালো। তাদের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট বিক্রির ৪৫ শতাংশই অনলাইনে হয়েছে। ঢাকায় যানজট ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে মানুষ এখন অনলাইনে টিকেট কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।
গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার জানান, তাদের মোট টিকেট বিক্রির ৩০ শতাংশ অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে। তবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকেই এখনো গ্রামের বাড়িতে যেতে আগ্রহী নন, তাই শেষ মুহূর্তে টিকেট বিক্রির সঠিক চিত্র বলা মুশকিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ এবং প্রতি বছর অনলাইনে টিকেট কেনার প্রবণতা বাড়ছে।
অনলাইনে যেভাবে টিকেট কাটবেন:
বাস, ট্রেন ও প্লেনের টিকেট বুকিংয়ের জন্য কিছু জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিচে দেওয়া হলো:
বাংলাদেশ রেলওয়ে ই-টিকেটিং সার্ভিস:
সরকারিভাবে ২০১২ সালের ২৯ মে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০ দিন আগে ট্রেনের টিকেট বুকিং দেওয়া যায়। প্রথমে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিতে হয়। এরপর স্টেশন, ভ্রমণের তারিখ ও ট্রেনের শ্রেণী নির্বাচন করে পছন্দের সিট বেছে নিয়ে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা বিকাশ দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হয়। পেমেন্টের পর প্রাপ্ত ই-টিকেটের প্রিন্ট নিয়ে স্টেশনে যেতে হয়।
ওয়েবসাইট: eticket.railway.gov.bd
তাদের “রেল সেবা” নামে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপও রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স:
রাষ্ট্রীয় এই বিমান সংস্থার ওয়েবসাইটে ২০১০ সাল থেকে অনলাইন টিকেট বুকিংয়ের সুবিধা রয়েছে। গন্তব্য, তারিখ, শ্রেণী নির্বাচন এবং যাত্রীর তথ্য দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং বা মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করা যায়। পেমেন্টের পর ই-মেইলে ই-টিকেট পাঠানো হয়।
ওয়েবসাইট: https://www.biman-airlines.com/
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপও রয়েছে।
সহজ:
বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও প্লেনের টিকেট পাওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিটি পরিবহন মাধ্যমের জন্য আলাদাভাবে যাত্রা ও গন্তব্য নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে। মোবাইল বা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার পর ই-মেইল বা এসএমএসে টিকেটের সফট কপির লিঙ্ক পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইট: https://www.shohoz.com/
তাদের মোবাইল অ্যাপও রয়েছে।
গোজায়ান:
এটি একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ)। এখানে ফ্লাইট, হোটেল, ট্যুর ও ভিসার সুবিধা পাওয়া যায়। টিকেট অর্ডার করতে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ওয়েবসাইটে একাধিক ফ্লাইটের মধ্যে তুলনা করার সুযোগও রয়েছে।
ওয়েবসাইট: https://gozayaan.com/
তাদের আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও রয়েছে।
শেয়ার ট্রিপ:
এটি দেশে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল দুই ফ্লাইটের জন্য অনলাইন টিকেটিং চালু করে। ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে টিকেট বুকিং করা যায়।
ওয়েবসাইট: https://sharetrip.net/
তাদের অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপও রয়েছে।
ফ্লাইট এক্সপার্ট:
এই ওয়েবসাইটে “বুক ন্যাউ (পে লেটার)” ফিচার রয়েছে, যার মাধ্যমে পেমেন্ট ছাড়াই টিকেট বুক করে রাখা যায় এবং পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করা যায়।
ওয়েবসাইট: https://flightexpert.com/
তাদের অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপও রয়েছে।
বিডিটিকেটস:
এটি বাসের টিকেট সংগ্রহের জন্য জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে প্লেন ও লঞ্চের টিকেটও সরবরাহ করে। তাদের মোবাইল অ্যাপও রয়েছে।
ওয়েবসাইট: https://bdtickets.com/
যাত্রী:
এই সাইটটির বিশেষত্ব হলো বাস ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা। ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকেট বুকিং ও বাসের অবস্থান জানা যায়।
ওয়েবসাইট: https://www.jatri.co/
তাদের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও রয়েছে।
পরিবহন.কম (paribahan.com):
এই ওয়েবসাইটে বাস, লঞ্চ ও বিমানের টিকেট কেনার সুযোগ রয়েছে। এখানে প্রায় সবগুলো অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থার সুবিধা আছে।
ওয়েবসাইট: https://paribahan.com/
তবে তাদের কোনো মোবাইল অ্যাপ নেই।
ঈদযাত্রার টিকেট এখন সহজেই অনলাইনে পাওয়া যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post