মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন করে আরও কয়েক ডজন দেশের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে অবগত একাধিক সরকারি কর্মকর্তা এবং রয়টার্স কর্তৃক সম্প্রতি দেখা একটি অভ্যন্তরীণ তালিকা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসও একই ধরনের খবর প্রকাশ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা বিশেষভাবে সতর্ক করে জানিয়েছেন, ৪৩টি দেশ নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে এবং এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে, প্রস্তাবিত এই তালিকায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি এখনও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুমোদন লাভ করেনি।
তালিকাভুক্ত দেশগুলোকে মূলত লাল, কমলা এবং হলুদ – এই তিনটি ভিন্ন ধাপে ভাগ করা হয়েছে। লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা কোনো অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। তাদের ওপর সম্পূর্ণভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এই তালিকায় থাকা দেশগুলো হলো – আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।
কমলা তালিকায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হলেও, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। ব্যাপক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই শেষে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শর্তাবলী পূরণ করতে সক্ষম হলেই কেবল কোনো ব্যক্তি ভিসা পেতে পারেন। এই তালিকা পর্যটক ভিসা, শিক্ষার্থী ভিসা এবং অন্যান্য কিছু নির্দিষ্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। কমলা তালিকায় স্থান পাওয়া ১০টি দেশ হলো – বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান এবং তুর্কমেনিস্তান।
অন্যদিকে, হলুদ তালিকায় থাকা দেশগুলোকে তাদের বিদ্যমান ত্রুটি সংশোধনের জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ত্রুটিগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের লাল অথবা কমলা তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে, এই দেশগুলোর নাগরিকরাও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবেন।
হলুদ তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ডমিনিকা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু এবং জিম্বাবুয়ে।
সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ আলোচনার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলা সরকারি কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে, এই তালিকাটি বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক তৈরি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসে খসড়া প্রস্তাবটি পৌঁছানোর সময় এতে পরিবর্তন আসতে পারে।
এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি সংস্থার মুখপাত্ররা কোনো মন্তব্য করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অথবা নিউইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে করা মন্তব্যের অনুরোধের কোনো জবাব দেননি।
তবে, পররাষ্ট্র দপ্তর পূর্বে এক বিবৃতিতে বলেছিল, “আমরা প্রেসিডেন্টের আদেশ অনুসরণ করছি। আমাদের ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তবে, অভ্যন্তরীণ আলোচনা সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্য জানাতে সরকারি কর্মকর্তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post