কুমিল্লায় র্যাবের ভুয়া পরিচয়ে এক কাতার প্রবাসীর নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতে এসে, র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল প্রতারক চক্র ওই প্রবাসীর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দেওয়া হলে, দুই চাঁদাবাজকে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার টমছমব্রিজ এলাকার পিপলস হসপিটালে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো – নগরীর চর্থা এলাকার কুখ্যাত জয় আহমেদ রুবেল ওরফে চশমা রুবেল (৩৫) এবং একই এলাকার সহযোগী নিরব আহমেদ রুবেল (৩৫)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই দুইজনের বিরুদ্ধেই কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক মামলাসহ প্রায় দশটির অধিক মামলা রয়েছে।
ভুক্তভোগী মো. ফারুক, যিনি পেশায় একজন কাতার প্রবাসী, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের অলীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, গত ৫ই মার্চ তার দশ বছর বয়সী পুত্র আরাফাত হোসেন শাওন অসাবধানতাবশত গরম ডালে ঝলসে গেলে তাকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছেলের অবস্থার অবনতি হলে, উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ই মার্চ তাকে টমছমব্রিজ পিপলস হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রবাসী ফারুক আরও জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয় ৬ই মার্চ দুপুর বেলা। যখন তার স্ত্রীর কাছে এক অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনে কলার নিজেকে আরাফাতের সহপাঠীর অভিভাবক হিসেবে পরিচয় দেয় এবং হাসপাতালে তাদের খোঁজ নিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, রাত প্রায় ১১টার দিকে ওই ব্যক্তি আরও তিনজনকে সাথে নিয়ে রোগীর কেবিনে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে একজন নিজেদের র্যাব সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে ফারুককে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, জীবন রক্ষার তাগিদে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা এবং পরে পরিবারের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন প্রবাসী ফারুক। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। শনিবার (৮ই মার্চ) দুপুর নাগাদ ওই চক্রটি পুনরায় হাসপাতালে এসে বাকি ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে এবং তাদের তৎপরতায় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তৎক্ষণাৎ ইপিজেড ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিকেল ৫টার দিকে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
কুমিল্লা ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো হয় এবং দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জয় আহমেদ রুবেল ওরফে চশমা রুবেলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে মাদক ও অস্ত্র আইনে চারটি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, নিরব আহমেদ রুবেলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদকসহ সাতটি মামলা বিদ্যমান। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে নতুন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post