বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে শ্রম অভিবাসন, নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে নতুন অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রিয়াদে সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের অধিক সুরক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা গড়ে উঠেছে। ড. আসিফ নজরুল সৌদি সরকারকে ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) পরিদর্শন এবং সেগুলোর দক্ষতা স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সৌদি পক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং সম্ভাব্য টিটিসি মূল্যায়নের সম্মতি জানায়।
বৈঠকে উচ্চ ইকামা নবায়ন ফি এবং এর ফলে কর্মীদের চাকরিহীন হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। সৌদি পক্ষ জানায়, শ্রম আইন সংস্কার করা হচ্ছে, যাতে কর্মী ও নিয়োগকারী উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষিত হয়। এছাড়া, কর্মীরা যাতে বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়ার আগেই নিয়োগ চুক্তি নিশ্চিতভাবে পায়, সে বিষয়েও সমঝোতা হয়।
ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে পেশাদার সার্টিফিকেট সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় দেরির বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার কালচারাল অ্যাটাচের অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সহায়তা চায়। সৌদি পক্ষ সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়।
অবৈধ শ্রমিক ও নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম দূর করতে শীঘ্রই একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া, গৃহকর্মী প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে বাংলাদেশ প্রশিক্ষণের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করে গুণগত মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ড. আসিফ নজরুল সৌদি আরবের মেগা প্রকল্পগুলোতে আরও দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সৌদি ভাইস মিনিস্টারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে আলোচনায় অনিয়মিত অভিবাসন রোধ ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সৌদি সরকারের সহায়তা চায়। সৌদি পক্ষ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেয়।
২০২২ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ভিত্তিতে উভয় পক্ষ মানব পাচার, অনিয়মিত অভিবাসন ও অর্থপাচার রোধে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। এছাড়া, ছোটখাটো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দিদের জন্য রাজকীয় ক্ষমার অনুরোধ জানানো হয়।
ড. আসিফ নজরুল ওমানের শ্রম উপমন্ত্রী সালিম আল-বুসাইদির সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওমানে অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মীদের জরিমানা ছাড়া বৈধকরণ এবং স্থগিত ওয়ার্ক ভিসা পুনরায় চালুর অনুরোধ করা হয়। ওমানের মন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন এবং বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের ওমানের শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
এই বৈঠকগুলো বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post