ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও এটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তসাপেক্ষ। পুরুষকে অবশ্যই তার সব স্ত্রীর প্রতি সমান আচরণ করতে হবে এবং তাদের ভরণপোষণ, আবাসন ও আবেগগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
“তোমরা যে-সব নারীর সঙ্গে বিবাহ করতে চাও, তাদের মধ্যে যাকে তোমরা পছন্দ করো—দুই, তিন অথবা চার জন। তবে যদি তুমি মনে করো যে, সবার সঙ্গে সমতা বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে একটাই স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে করো।” (সুরা নিসা: ৩)
একাধিক বিয়ের কারণ ও হেকমত
১. সমাজ ও উম্মাহর উন্নয়ন
একাধিক বিয়ের মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা উম্মাহকে শক্তিশালী করে। যদি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসম্পদ উন্নয়ন করা হয়, তবে এটি সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হয়।
২. লিঙ্গ অনুপাত ভারসাম্য রাখা
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে নারীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি। একাধিক বিয়ার অনুমতি না থাকলে অনেক নারী আজীবন অবিবাহিত থেকে যেতে পারেন, যা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
৩. যুদ্ধ ও বিপজ্জনক পেশাজীবীদের জন্য সমাধান
পুরুষরা অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধক্ষেত্রে বা বিপজ্জনক পেশায় কাজ করার ফলে মৃত্যুবরণ করে। এতে অনেক নারী বিধবা হয়ে পড়েন, এবং তাদের জন্য পুনরায় বিয়ের সুযোগ একাধিক বিয়ার বিধান দ্বারা সহজ হয়।
৪. বিশেষ শারীরিক চাহিদা পূরণ
কিছু পুরুষের শারীরিক চাহিদা অত্যধিক হতে পারে। একাধিক বিয়ার অনুমতি না থাকলে তারা হারাম পথে যেতে পারে, যা সমাজে অনৈতিকতা বৃদ্ধি করতে পারে।
৫. পূর্ববর্তী ধর্ম ও ঐতিহ্য
ইসলামের আগেও বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় একাধিক বিয়ার প্রচলন ছিল। আগের নবীদের জীবনেও একাধিক বিয়ার নজির দেখা যায়। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং একাধিক স্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে চারজন রেখে বাকিদের তালাক দিতে বলা হয়েছিল।
৬. বন্ধ্যাত্ব বা অসুস্থতার সমাধান
কিছু নারী বন্ধ্যা হতে পারেন বা অসুস্থতার কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক রাখতে অসমর্থ হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্বামী যদি সন্তান কামনা করেন, তবে দ্বিতীয় বিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধান হতে পারে।
৭. বিধবা ও একাকী নারীদের পুনর্বাসন
যেসব নারী বিধবা বা একাকী এবং আর্থিকভাবে অসহায়, তাদের পুনর্বাসনের জন্য একাধিক বিয়ার বিধান কার্যকর হতে পারে। এটি সমাজে মানবিকতার প্রসার ঘটায়।
৮. সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ়করণ
কখনো পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করার জন্য একাধিক বিয়ে করা হতে পারে। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর কিছু বিয়ে ছিল কৌশলগত, যা বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনে সহায়ক হয়েছিল।
৯. নারীর প্রাকৃতিক শারীরিক অবস্থা
নারীদের মাসিক চক্র, গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন শারীরিক অবস্থার কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হয় না। এমন সময়ে স্বামীর জন্য বৈধ বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি রয়েছে।
১০. বার্ধক্যের কারণে যৌন সামর্থ্যের পার্থক্য
পুরুষের যৌন সক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হলেও নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্রুত কমে আসে। এ কারণে কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে যৌক্তিক হতে পারে, যা ব্যভিচার রোধে সহায়ক।
শেষ কথা
ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও এটি বাধ্যতামূলক নয়। বরং এটি দায়িত্ব ও ন্যায়বিচারের শর্তে সীমাবদ্ধ। একাধিক বিয়ার অনুমতি সমাজে ভারসাম্য ও নৈতিকতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়েছে। তবে যেসব পুরুষ এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম নন, তাদের জন্য একটিই বিয়ে যথেষ্ট বলে ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post