ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মিশর ও জর্ডানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দেয়নি আরব বিশ্ব। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় হাজারো মানুষের জীবনহানি এবং মানবিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা গাজার বাসিন্দাদের জন্য এটি অস্থায়ী নাকি স্থায়ী সমাধান, ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “হতে পারে।”
জর্ডানে ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। মিশরেও হাজারো ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। মিশর, জর্ডান এবং অন্যান্য আরব দেশ গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশে সরিয়ে নেওয়ার ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবেই থাকতে চায়।
এদিকে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের গাজায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বরাবরই বেজালেলের এই ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন।
হামাসের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে আসছেন। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম রয়টার্সকে বলেন, ফিলিস্তিনিরা এমন কোনো প্রস্তাব বা সমাধান মেনে নেবে না। এমনকি যদি পুনর্গঠনের মতো ভালো উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়, যেমনটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তবুও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
হামাসের আরেক কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের “ব্যর্থ” ধারণাগুলোর পুনরাবৃত্তি না করার অনুরোধ করেছেন। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবু জুহরি বলেন, গাজার জনগণ নির্বিচারে মৃত্যু সহ্য করেছে এবং তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছে। অন্য কোনো কারণেও তারা গাজা ছেড়ে যাবে না।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যে কোনো ধরনের স্থানচ্যুতির বিরুদ্ধে তাদের দেশের “দৃঢ় ও অটল” অবস্থান রয়েছে।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই অবস্থান নিয়েছে। দেশটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি থেকে স্থানচ্যুতিকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে মিশর। সেটা স্বল্পমেয়াদে হোক, কিংবা দীর্ঘমেয়াদে।
ফিলিস্তিনের পশ্চিমা-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মানুষেরা অবিচল থাকবে এবং মাতৃভূমি ত্যাগ করবে না।”
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক ঘাসান আল-খাতিব বলেন, “পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিরা, সেই সঙ্গে জর্ডান ও মিশরীয়রা ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি মনে করি না বাস্তবে এমন ধারণার কোনো স্থান আছে।”
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে গত শনিবার কথা হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহকে তিনি বলেছেন, “আমি খুশি হব, যদি আপনি আরও বেশি করে (ফিলিস্তিনিদের) আপনাদের দেশে আশ্রয় দেন। কারণ, গাজা উপত্যকা এখন সত্যিকার অর্থেই একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
ট্রাম্প বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস ছিল।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post