বিশ্বব্যাপী আলোচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের মানচিত্র আঁকা অসম্ভব। কারণ, বাংলাদেশের স্থলসীমান্তের প্রায় পুরো অংশই ভারতের সঙ্গে যুক্ত। তাই দুই দেশের সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।”
ড. ইউনূস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, জোরপূর্বক গুম এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলে বলেন, “শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় যে নীরব থেকেছে, তা ভালো কোনো বিশ্ব ব্যবস্থার উদাহরণ হতে পারে না। বিশ্ব এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রশ্ন না তুলে দায় এড়াতে পারে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “হাসিনা গোটা বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষা। তাঁর শাসনব্যবস্থার দায়ভার শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যবস্থাকেও নিতে হবে।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে প্রচলিত ধারণার সমালোচনা করে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছি, এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল। অর্থনীতির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি তখনই সম্ভব, যখন তা সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জীবনে পরিবর্তন আনবে। অর্থনীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিই দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের চাবিকাঠি।”
নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি জানান, “আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নই। তবে আগামী ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “ভারত বরাবরই শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে এসেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততার একটি বড় কারণ। দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সুসম্পর্কের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেন। তার পতনের পর ছাত্র নেতাদের সুপারিশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
