বাংলাদেশে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে এই বিনিয়োগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এসব চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হলে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সৌদি-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা’ -শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন, আতিথেয়তা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সে কারণে সম্মত হওয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পেরও খুব বেশি অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে— সময়মতো জমি বরাদ্দ না পাওয়া, সহায়ক অবকাঠামোর অভাব, বিনিয়োগে জটিল প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও পরিষেবা পেতে অস্বাভাবিক বিলম্ব।
অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে— ইতিবাচক বিনিয়োগ নীতি ও ব্যবসায়িক বিধিবিধানের অভাব, পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাব, জটিল বাণিজ্য ও শুল্ক পদ্ধতি এবং বিনিয়োগবান্ধব কর পরিবেশের অভাব।
দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ আরও সহজ করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে পলিসি এক্সচেঞ্জ। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা বা মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা, অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো যৌথভাবে চিহ্নিত করা, প্রকল্প উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে নীতি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া।
আরও রয়েছে, জমি বরাদ্দের জন্য একটি ওয়ান-স্টপ সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা, বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করার পাশাপাশি বিলম্ব কমাতে নির্দিষ্ট অনুমোদন ও পরিষেবাগুলোকে আরও সহজতর করা, জরুরি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিয়মিত সভা ও সংলাপ সহজ করা।
পলিসি এক্সচেঞ্জ নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী কর ছাড় দেওয়া, সৌদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য কোন প্রণোদনা সবচেয়ে কার্যকর হবে, তা চিহ্নিত করা এবং বিনিয়োগ নীতি ও ব্যবসায়িক নিয়ম-কানুন পর্যালোচনা এবং সহজ করার সুপারিশ করেছে।
বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এবং সিইও এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আরও ব্যাপক সম্ভাবনা আছে, সেটা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের দিক থেকে হতে পারে।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়াও আছে। তবে আমাদের দেশ থেকে যেসব পণ্য সৌদিতে রপ্তানি হয়, সেসব পণ্য রপ্তানির আরও সুযোগ আছে। সেজন্য সৌদি বাজারকে আরও ভালোভাবে আমাদের বুঝতে হবে।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, সৌদি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগে কোথায় কোথায় সমস্যা, সেটা চিহ্নিত করে সামনের দিকে এগোতে হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ আরও সহজীকরণে আমাদের নজর দিতে হবে। আমরা যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছি, সেখানে অনেক সমস্যা চিহ্নিত করা আছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
জানুয়ারির শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরব বহুমুখী সম্পর্ক গড়তে চায়।
তিনি জানান, সৌদি আরব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশে সৌদির বিভিন্ন কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমাদের দেশ সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সবসময় সত্যি নয়। বর্তমান সরকার অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post