গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি নিয়ে বেশ আশার আলো দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান ও চ্যানেল-১৩ জানিয়েছে, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ কমান্ডের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর ইসরায়েলি দখলদার সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দুটোর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিন জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে জিম্মি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে কাতার। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার আশা প্রকাশ করেছে, খুব শিগ্গির একটি চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সোমবার বলেছেন, একটি চুক্তি ‘প্রায় চূড়ান্ত’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানিয়েছিলেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কানের সামরিক প্রতিবেদক ইতাই ব্লুমেনথাল জানিয়েছেন, নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফাহ সীমান্ত, নেতজারিম ও ফিলাডেলফি করিডর রুট থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ব্লুমেনথাল আরও উল্লেখ করেছেন, গাজার ভেতর থেকে সেনা সরিয়ে নিলেও ইসরায়েল গাজা উপত্যকার চারপাশে পুনরায় সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি ধাপে ধাপে সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে গাজার সীমান্ত বরাবর প্রায় এক কিলোমিটার চওড়া একটি বাফার জোন তৈরি করবে ইসরায়েলি বাহিনী।
কানের প্রতিবেদক আরও জানিয়েছেন, গাজা থেকে সম্ভাব্য ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি, মিসরীয় ও মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন ইসরায়েলি দখলদার সরকারের একটি রাজনৈতিক সূত্র দেশটির চ্যানেল ১৩-এ বলেছে, ‘হামাসকে কেবল সামরিক উপায়ে পরাজিত করা সম্ভব নয়। উত্তর গাজা উপত্যকার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোই এটি প্রমাণ করে।’
সূত্রটি আরও বলেছে, ‘হামাস পুনরায় তাদের যোদ্ধাদের সংখ্যা প্রায় আগের মতোই বাড়িয়ে নিয়েছে, এটি স্পষ্ট করে দেয় যে কেবল সামরিক চাপ দিয়ে এই সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব নয়।’
ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক প্রধান গিওরা আইল্যান্ডও স্বীকার করেছে যে, গাজার বিষয়ে ইসরায়েল ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে। তিনি বলেন, দখলদার বাহিনী যুদ্ধের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আইল্যান্ড চ্যানেল-১৩কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাস তীব্র আঘাতের পরও ফিরে এসেছে। সব বন্দী মুক্ত করা সম্ভব হবে না এবং গাজা থেকে হামাসের কর্তৃত্ব মুছে ফেলার লক্ষ্য অর্জনও অসম্ভব।
আইল্যান্ড আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েলি সামরিক চাপ হামাসের ওপর কার্যত কোনো প্রভাব ফেলেনি। তিনি বলেন, বর্তমানে যে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা গত মে মাসে প্রস্তাবিত চুক্তির সঙ্গে প্রায় একই রকম। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে এবং এটি আর নতুন করে শুরু হবে না। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও।’
এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘কেবল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই বাস্তবতা মানতে নারাজ। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচসহ সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post