ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দীর্ঘদিন ধরে ‘অখণ্ড ভারত’-এর স্বপ্ন প্রচার করে আসছে। এই আদর্শকে ভিত্তি করে বর্তমান শাসক দল বিজেপিও তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকালে ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্রসহ একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। এতে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়।
এই মানচিত্র প্রকাশের পর প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। পাকিস্তান ও নেপালের প্রতিবাদ এবং বাংলাদেশ সরকারের চাপের মুখে ভারত এটি সম্রাট অশোকের মানচিত্র হিসেবে দাবি করে। তবে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়, এটি তাদের অখণ্ড ভারতের পরিকল্পনারই প্রতিফলন।
অভ্যন্তরীণ সংকটে বিপর্যস্ত ভারত
অখণ্ড ভারতের ধারণা বাস্তবায়নের স্বপ্ন প্রচার করলেও, অভ্যন্তরীণ সংকট বিজেপি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মণিপুর রাজ্যে কুকি ও মেইতিদের মধ্যে সংঘর্ষে ২৬০ জনের বেশি নিহত এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা বিদ্রোহীদের অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে যুক্ত হওয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল দোহমার বিচ্ছিন্নতার দাবি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের গুঞ্জন নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মিয়ানমার থেকে আসা বিদ্রোহীদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে এই অস্থিতিশীলতা মোদি সরকারের জন্য গভীর সংকট তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের একঘরে অবস্থান
কূটনৈতিক ব্যর্থতা ভারতের জন্য নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ভারতের একঘরে হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের জুনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হলে ভারত ভবিষ্যতে খণ্ড খণ্ড হতে পারে।
অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন নাকি বিভাজনের আশঙ্কা?
বিজেপি-আরএসএসের অখণ্ড ভারত গঠনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন শুধু প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্বের কারণে নয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণেও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মণিপুর, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উত্তেজনা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংকট দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর বড় আঘাত হানছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে অখণ্ড ভারত গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার বদলে এটি বিজেপি-আরএসএসের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post