ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে প্রতিবেশী দেশের প্রসঙ্গ তুলে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
সোমবার (২০ নভেম্বর) বিধানসভার অধিবেশনে মমতা অভিযোগ করেন, একটি রাজনৈতিক দল ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তিনি নাম উল্লেখ না করেই বলেন, “অনেক ভুয়া ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্য উস্কানি দিচ্ছে।”
মমতা সম্প্রীতি ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, “কেউ এমন কোনো মন্তব্য করবেন না যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা এবং শান্তি রক্ষার পক্ষে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান—সব সম্প্রদায়ের রক্ত এক।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চাওয়া কিছু মুসলিম নেতাকে তিনি তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। “সমাজবিরোধী গোষ্ঠীগুলো দাঙ্গা উসকে দেয়। আমরা দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই,” বলেন মমতা।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব ভিডিওতে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তিকে ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। মমতা বলেন, “অনেক ভুয়া ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই পরিস্থিতিকে ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। মমতার মতে, “যারা এটি নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাদের মনে রাখা উচিত, এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
বিধানসভায় মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশে শান্তি বজায় রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে তার এই মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে।
মমতা স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে কিছু কর্মসূচি দেখা গেছে। মমতা এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেন, “ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করলে উভয় পক্ষের মানুষের ক্ষতি হবে।”
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ২০২৬ সালের রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি এই ইস্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তবে মমতা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কোনো উস্কানি দিয়ে বাংলার শান্তি বিনষ্ট করা যাবে না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post