বাংলাদেশের আগরতলায় ভারতের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা ও পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকার তরফে দিল্লিকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দল, ধর্মীয় সংগঠন এবং ছাত্রদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় বাংলাদেশের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার সংকল্প জানানো হয়।
এছাড়া, গত দেড় দশকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে উচ্চতা ছিল, তা ৫ আগস্টের পর তলানিতে চলে গেছে। যদিও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনও কিছুটা সচল, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দৃশ্যমান।
ভারতের উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু
বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভারত বিরোধী বক্তব্যের উত্থান ভারতকে উদ্বেগে রেখেছে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের গতি ভারতের জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের পুনঃস্থাপন ভারতকে উদ্বিগ্ন করেছে।”
শ্রীরাধা আরও বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজের আগমন এবং পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের পুনর্জাগরণ, ভারতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পাকিস্তানের প্রভাব এবং ভারতীয় উদ্বেগ
ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং নিরাপত্তা বিষয়ক আশঙ্কা বাংলাদেশে ভারত বিরোধী কার্যক্রমের শঙ্কা বাড়াচ্ছে। ভারতীয় গোষ্ঠী বিশেষত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে সহিংস কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে মনে করছে।
শ্রীরাধা বলেন, “বাংলাদেশে যেভাবে পাকিস্তান বিরোধী কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তাতে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে।”
বাংলাদেশের অবস্থান
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং পতাকা পোড়ানোর পর ঢাকায় ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করে, শাহবাগে বিক্ষোভ এবং শহীদ মিনারে প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব উত্থিত হলেও, বিশ্লেষকদের মতে, এটি আরও এক ধাপ পরিস্কার করেছে যে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।
দু’দেশের জনগণের সম্পর্কের অবনতি
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো জনগণের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি। সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, “দু’দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা দেশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে, যা ভবিষ্যতে আরো বেশি সংঘর্ষের কারণ হতে পারে।”
এটি বিশেষভাবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর জন্য উদ্বেগজনক, যেখানে ভারতীয়রা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে এবং পণ্যবাহী যাত্রায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যত
অবশ্যই, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ সময়। সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বলেন, “দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে আলাপ-আলোচনা অপরিহার্য। স্বাভাবিক সম্পর্কের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতি পরিবর্তিত হয়েছে, তবে এর সমাধান সম্ভব যদি দুই দেশ একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে চলে।”
এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় দেশের নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ প্রয়োজন, যেন দুই দেশের জনগণের মধ্যে আবারো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post