দেশে এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। চলতি বছরে নতুন এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের একটি বড় অংশ সমকামী। একসময় অভিবাসী কর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেলেও এবার নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সমকামীর হার বেশি।
গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
এই সময়ে সংক্রমণের হার কমেছে যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে। তবে বেড়েছে সমকামী ও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। সাধারণ মানুষের বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছে বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিক দ্বারা।
দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব এইডস দিবস’।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছে এক হাজার ৪৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সমকামী, ২৪ শতাংশ সাধারণ মানুষ ও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিক, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬, খুলনায় ১৫৪, রাজশাহীতে ১৪৭ এবং অন্যান্য বিভাগে ৪৪ থেকে ৮৬ জন পর্যন্ত। এসব রোগীর ৬৩ শতাংশই ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধমে দেশের সমকামী ব্যক্তিরা একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পরে দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। এদের এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ ও হিজড়া ১ শতাংশ । মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব।
বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দেশে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয় ১২ হাজার ৪২২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে দুই হাজার ২৮১ জন। ইউএনএইডসের অনুমিত হিসাবে দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজার। সংক্রমিত ব্যক্তির তুলনায় শনাক্তের হার ৮৮.৭২ শতাংশ।
সংক্রমিত সাত হাজার ৫০০ মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখনো প্রায় দুই হাজার সংক্রমিত ব্যক্তি চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
এইডস ছোঁয়াচে রোগ নয়
এইচআইভি হলো এক ধরনের ভাইরাস। ইংরেজিতে হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে এবং চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, যেটাকে এইডস বলা হয়।
চিকিৎসকরা বলেন, এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। হাঁচি, কাশি বা থুুতুর মাধমে, একই পাত্রে খাবার বা পানি খেলে আক্রান্ত ঝুঁকি নেই। এমনকি একসঙ্গে ওঠাবসা, খেলাধুলা বা স্পর্শ করলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে রোগটি ছড়ায় না।
তবে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ-সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ব্যতীত যৌন মিলন করলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় অথবা বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তান আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসার আওতা বাড়ছে না
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ২৭টি জেলায় হাসপাতাল অথবা এনজিও ক্লিনিকে এইচআইভি পরীক্ষা ও সেবা দেওয়া হয়। তবে দেশের সব জেলায় এখনো এই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি—জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। সেখানেও আবার জটিল রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় না।
শনিবার জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আটজন রোগী ভর্তি আছে, যাদের ছয়জনই সংক্রমিত হয়েছে পরিবার থেকে।
হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪ সালে নভেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি সন্দেহজনক দুই হাজার ৪৯০ জনকে পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ১৮৮ জনের। এই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। নতুন সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সমকামী পুরুষ ৭১ জন।
হাসপাতালটির জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শ্রীবাস পাল বলেন, ‘১০ বছর আগে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই গ্রুপের মধ্যে বেশি ছিল। এক হচ্ছে যৌনকর্মী, আর দ্বিতীয় হচ্ছে যারা যৌনকর্মীর সেবা গ্রহণ করত। কিন্তু গত দু-তিন বছরে আমাদের এখানে সমকামী পুরুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।’
ডা. শ্রীবাস পাল বলেন, ‘আমরা জেনেছি সমকামীদের মধ্যে অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাপসভিত্তিক গ্রুপে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গ্রুপে যুক্ত রয়েছে কয়েক লাখ তরুণ। তাদের অনেকেই আক্রান্তের ঝুঁকিতে আছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post