পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মী- সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানী ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকা। পাকিস্তানের প্রশাসনিক কেন্দ্র খ্যাত ডি-চকের দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠা পিটিআই কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
এই অভিযানের আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইসলামাবাদের সব মার্কেট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে রাতে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যতদিন দরকার ইসলামাবাদে অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা। কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, মঙ্গলবার পাকিস্তানের আধা-সামরিক বাহিনী পাক রেঞ্জার্সের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে তাজা গুলি বর্ষণ করেছে।
পিটিআই বলছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে তাদের অন্তত দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২০ জনের বেশি। আহতদের উদ্ধারের পর স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে, ডি-চকের চারপাশ ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর তৈরি করা প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে সেখানে পৌঁছান কিছু বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভকারীদের বাধা দিতে সড়ক-মহাসড়কে বিশাল আকারের কনটেইনারের প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা এসব কনটেইনারের ওপরে উঠে পড়েন। এ সময় পাক রেঞ্জার্সের সদস্যদের বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে তাজা গুলি ছুড়তে দেখা যায়। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত রয়েছেন।
এ সময় আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্যরা তাজা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভকারীরা আবারও ডি-চকে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রেড জোন এলাকা ডি-চকের প্রত্যেকটি প্রবেশমুখের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকের বিশাল একটি বহর এখনও ইসলামাবাদ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কঠোর প্রতিক্রিয়ার কারণে এই বহরের ইসলামাবাদ অভিমুখী গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, সন্ধ্যার দিকে রেঞ্জার্সের কর্মীরা ডি-চকের সব প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছেন। তবে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা আবারও ডি-চকের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন। দেশটির অত্যন্ত সুরক্ষিত ও স্পর্শকাতর এই এলাকায় সমবেত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইসলামাবাদের চতুর্দিক থেকে পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে আসছেন।
• ডি-চকের দখল নিতে কেন মরিয়া পিটিআই?
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা আলী আমিন গান্দাপুর পিটিআইয়ের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের ডি-চকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইসলামাবাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত রেড জোনের একটি এই ডি-চক। পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গোলচত্বরকে।
ডি-চক এলাকায় দেশটির সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দেশটির সংসদ ভবন, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় পরিষদ ভবন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাস এবং হাইকমিশন রয়েছে।
ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ডি-চককে দেশটিতে অনেকেই ‘‘ডেমোক্রেসি চক’’ নামেও বর্ণনা করে থাকেন। স্থানটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদের প্রধান চত্বর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ওই স্থানটিতে প্রায় এক মাস ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ডি-চক থেকে প্রায় ৫৫০ মিটার দূরে জড়ো হচ্ছেন; যেখানে তিন স্তরের কনটেইনারের স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post