আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইল মসজিদ নিয়ে তাবলিগ-জামাতের দুই পক্ষ ক্রমশ সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে মাওলানা সাদপন্থিদের কাকরাইল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও শক্তি প্রদর্শন করে দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবে হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মাদরাসার ছাত্ররা।
তবে তাবলিগের সাদ অনুসারীরাও কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের মাধ্যমে তাদের জনশক্তি জানান দিয়ে কাকরাইল মসজিদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তাবলিগ-জামাতের বিবদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে বিগত ৭ বছর যাবত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও বিগত সরকারের এমন বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থিরা।
অপরদিকে কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থিরা সারা বছর আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থি আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থিরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লিরা। তারা মনে করছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারা দেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।
তাবলিগের মাওলানা সাদপন্থির অনুসারী গ্রুপের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সহাবস্থানের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু জুবায়েরপন্থিরা উগ্রতার দিকে হেঁটে পরিস্থিতিকে জটিল ও সাংঘর্ষিক করে তুলছেন। আমরা স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকালে কাকরাইলে প্রবেশ করবে। এখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর দায় যুবায়েরপন্থিদের ও প্রশাসনকে নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে মাওলানা জুবায়েরপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার জুবায়েরপন্থিরা কাকরাইল মসজিদ ছাড়তে চান না। যেকোনো মূল্যে কাকরাইলে এককভাবে তারা কার্যক্রম চালাতে চান।
প্রসঙ্গত, আগামী বছর দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
ইজতেমা নির্বিঘ্ন করতে তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকের কথা থাকলেও আলমি শুরার প্রতিনিধিরা (জুবায়েরপন্থিরা) এতে অংশগ্রহণ করেননি, যদিও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া, কোন পক্ষ আগে এবং কোন পক্ষ পরে ইজতেমা করবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আলমি শুরার পন্থিরা ৫ নভেম্বর সারা দেশের মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে ঢাকায় সমাবেশ করে সাদপন্থিদের সব কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
এ ছাড়া, কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে জুবায়েরপন্থিদের সমর্থক ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ।
এর প্রতিক্রিয়ায় সাদপন্থিরা ৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল মঙ্গলবার আলমি শুরার পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে হেফাজতে ইসলাম সমর্থিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ফের সংবাদ সম্মেলন করবেন মাওলানা সাদের অনুসারী তাবলিগের সাধারণ সাথীরা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর কাকরাইল ও এর আশপাশের এলাকায় গত ১ নভেম্বর থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post