শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ আমার কাছে নেই। আমি শুনেছি যে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।– দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। কথোপকথনটি রোববার একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’—এ প্রকাশিত হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই নানা আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারপতনে মূল ভূমিকায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাষ্ট্রপতির সমালোচনায় মুখর হন।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন আড়াই মাস পর বলছেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। এমন কথা বলা স্ববিরোধিতা।
আসিফ নজরুল দাবি করেন, তিনি (রাষ্ট্রপতি) মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের সামিল। তার বক্তব্যে অটল থাকলে তিনি পদে থাকতে পারেন কিনা তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচিত হতে পারে।
এর আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে; একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।
অবশ্য এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার কথা বলেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তখন এ নিয়ে আলোচনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে?
এই আলোচনার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এই সরকার চাইলেই কি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁও হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। অর্থাৎ সরকার পারে, আবার পারে না।
সহজভাবে বলতে গেলে, বর্তমান সংবিধান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা সম্ভব না। আবার অন্যভাবে বললে, এই সরকার চাইলে রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে বলতে পারে। এবং সেটাই এই সরকারের একমাত্র উপায়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজেই পদত্যাগ করে চলে যেতে পারেন। পরে নতুন একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তবে এই বিষয়টি যে খুবই সহজ তা কিন্তু নয়।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ৫২, ৫৩ ও ৫৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলা আছে। সেক্ষেত্র অবশ্যই সংসদ কার্যকর থাকতে হবে। সংসদ সদস্যরাই কেবল রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা অভিসংশন করার ক্ষমতা রাখেন। আবার রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এবং তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন দিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হবে।
এই মুহূর্তে এর কোনোটিই সম্ভব না। কেননা সংসদ কার্যকর নেই। স্পিকারও নেই। তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি ইনচার্জে থাকেন। তাঁকে তখন রাষ্ট্রপতি হতে প্রস্তাব করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক মনে করেন এখন সংবিধানের বাইরে গিয়েও গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো বিচ্যুতি হবে না। তিনি বলেন, ‘ফুটবল খেলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে ফাউল, হ্যান্ডবল, পেনাল্টি, কিছুই নেই। তাই বলে কি গোল হবে না? গোল কীভাবে হবে, সেটা তো নির্ধারিত হতে হবে।
অর্থাৎ আইন বা সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুযোগ এখন নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ওই সুযোগ নাই। রাষ্ট্রপতি এখন স্বেচ্ছায় বা কারও কথায় চলে যেতে পারেন। কারও কথায় যাওয়া অসম্ভব কিছু না। ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা বললেই চলে যাবে। সেনাবাহিনী ও সরকার চাইলে এক সেকেন্ডের ব্যাপার।
তিনি বলেন, এখন আইনি কাঠামোর কথা চিন্তা করার দরকার নেই। এখন যা হবে তা এমনিতেই হবে। তবে তিনি এও বলেন, এখন যা হবে সেটা ভবিষ্যতে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে আসা সরকারের অনুমোদিত হতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post