৭ দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এই দাবিসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সর্বমোট সাতটি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানান মাহমুদুর রহমান।
যেসব দাবি জানানো হয়েছে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে; বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এক সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে; যমুনা সেতুকে শহীদ আবু সাইদের নামে নামকরণ করতে হবে। যাতে মানুষ সেখান দিয়ে পার হওয়ার সময় শতাব্দীর পর শতাব্দী আবু সাইদকে দেখতে পায়।
২০০৯ সালের পর থেকে ভারতের সঙ্গে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার প্রত্যেকটার ধারা উপধারা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জনগণকে জানতে হবে ভারতের সঙ্গে কী কী চুক্তি হয়েছে এবং এগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে। যেখানে ভারতের ও ফ্যাসিবাদের দোসর থাকতে পারবে না; বঙ্গবন্ধু এভিনিউকে শহীদ আবরারের নামে নামকরণ করতে হবে। কারণ শহীদ আবরার এই ফ্যাসিবাদ আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নমিনেশন অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারণ এই পুতুলকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল জালিয়াতির মাধ্যমে এবং আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম এবং বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর হত্যাকাণ্ডের বিষয় তদন্ত করতে হবে।
মতবিনিময়কালে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পর যে পাঁচ দিন আমি কারাগারে ছিলাম, আমার জন্য যে পরিমাণ ভালোবাসা দেশের মানুষ এবং দেশের বাহিরে থেকে মানুষ দেখিয়েছে তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি এর যোগ্য নই। আমি বিশিষ্ট ব্যক্তি নই, রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। এরকম কোনো আকাঙ্ক্ষাও আমার নাই। আমি এদেশের আমজনতার বর্ষীয়ান একজন প্রতিনিধি মাত্র।
তিনি বলেন, ‘আমার দেশ’ স্বাধীনতার কথা বলে এই মেসেজ আমরা পত্রিকা থেকে দিতাম। এই কথাটা ছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতের আধিপত্যবাদের বিরোধী কথা বলার ক্ষেত্রে একটি মেসেজ। এটি তারা বুঝতে পেরেছিল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া এখনো ভারতীয় ফ্যাসিবাদীরা দখল করে বসে আছে। এটিই সত্য। মিডিয়ার মালিক বা সম্পাদক এদের বেশিরভাগই ভারতের এজেন্ট।
মৌলবাদ শব্দ ব্যবহার না করতে সরকারকে সতর্ক করে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, ‘অতি ইসলামিক এবং মৌলবাদ ট্যাগ ব্যবহারকারীদের প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্কার কমিটির দায়িত্বে আছেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বললেন দেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে। সরকারে থেকে এ ধরনের ব্যক্তিগত কথা বলা যায় না। তার বক্তব্য সরকারের বক্তব্য হয়ে যায়। তিনি এই মৌলবাদ কোথায় পেলেন? এই মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে, এটি ব্যবহার করে আয়নাঘর হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এখন ইফতেখারুজ্জামান আবার মৌলবাদের কার্ড ব্যবহার করছেন, আপনার উদ্দেশ্য কী? নতুন কায়দায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা এটি আপনার উদ্দেশ্য। আপনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। মৌলবাদ শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে আমি সতর্ক করে দিতে চাই।
সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতি ইসলামিকও হবেন না। ফ্যাসিবাদের সময় আপনারা কিছু করতে পারেননি। এখন স্বাধীনতা পেয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। এর কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যারা বাড়াবাড়ি করছেন আস্তিক আর নাস্তিক, হিন্দু ধর্ম এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন এতে ভারতীয় যে কৌশল তা আপনারা বাস্তবায়ন করবেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে ক্ষমা চাইতে হবে মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এতই পাওয়ারফুল যে তাকে এক এগারো সরকারের সময় আইন পরিবর্তন করে সরকারে নেওয়ার জন্য। আর তিনি বর্তমানে সরকারের প্রধান ইউনূসের সাথে আমেরিকায় সফরসঙ্গী। সালাহউদ্দিন যাননি, গেছেন দেবপ্রিয়। এই দেবপ্রিয় ২০০৫ সাল থেকে এক আগারো সরকারের সময় দেশে ইন্ডিয়ান করিডোর দেওয়ার জন্য প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করতেন। বিদেশের টাকা নিয়ে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করেছেন তিনি। তার বক্তব্য সেদিন ছিল যে করিডর থেকে দেশ যে শুল্ক পাবে তা দিয়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। তার কাছে আমরা জানতে চাই গত ১৬ বছরে ট্রানজিট থেকে কত ডলার বাংলাদেশ আয় করেছে তার কাছে জানতে চাই। এখন পর্যন্ত কেউ সরকারকে প্রশ্ন করেননি। আমরা দেখেছি সংবাদ সম্মেলনে কী করা হতো। আমার দেশ থাকলে এই প্রশ্ন করা হতো। এই দেবপ্রিয়কে তার মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত যারাই আসুক দিল্লির পক্ষে যারা কথা বলবে তাদের সাথে আমাদের লড়াই চলবে। আমি যতদিন জীবিত আছি ততদিন আমার লড়াই চলবে। আমি সবাইকে কথা দিচ্ছি, জনগণের কাতারে থেকে জনগণের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করব।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post