গান বাজনা আর অশ্লীলতামুক্ত সিলেটের শাহপরান রহ. মাজার এলাকায় হামলা চালিয়েছে পাগলবেশে একদল লোক।
ভোরে মাজার মসজিদ এলাকায় জিকির ও দোয়া চলাকালে এ হামলা চালায়। এ সময় মুসল্লি ও ছাত্রজনতা প্রতিরোধ গড়লে পাগলের বেশধারী হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে হামলাকারীরা মাজারের খাদিমদের দান সদকা সংগ্রহের বৈঠকখানাসহ মাজার অফিসে ভাঙচুর চালায়।
এদিকে মাজার এলাকায় হামলার খবর পেয়ে সকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় এসএমপি কমিশনার দোষীদের সনাক্তকরণ আইনে আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
এদিকে সিলেটের হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার-কে কেন্দ্র করে ওরসের নামে নাচ-গান-মদ-জুয়া, গাজা, অশ্লীলতা, নারী-নৃত্যসহ যাবতীয় অসামাজিক-অনৈতিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন স্থানীয় তৌহিদী জনতা। গত শুক্রবার বাদ জুমআ মাজার মসজিদসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা মাজার গেটে জড়ো হন। এ সময় তারা সিলেট-তামাবিল সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা ওরসের নামে সব ধরনের অশ্লীলতা ও অনৈসলামিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও রোববার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী ৪, ৫ ও ৬ রবিউল আউয়াল তিনদিন ব্যাপী ওরসের আয়োজন করে থাকে মাজার কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে প্রথম দিন খতমে কোরআন, দোয়া ও জিকির আজকার এবং মিলাদ মাহফিল। দ্বিতীয় দিন গিলাফ চড়ানো, গরু জবেহ, সারারাত জিকির আজকার ও মিলাদ মাহফিল এবং ভোর ৪ টায় ফাতেহা পাঠ। শেষ দিন বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের পর নেওয়াজ বিতরণ করা হয়।
মাজার কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট কর্মসূচির বাইরে ওরস চলাকালে ভক্ত আশেকানরা প্যান্ডেল করে নাচ-গান-মদ-জুয়া, গাজা, অশ্লীলতা, নারী-নৃত্যসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া মেলার নামে জুয়ার রমরমা আসর বসানো হয় ওরসের সময়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার হাজার ভক্ত আশেকান ইবাদত বন্দেগি ছেড়ে এই সকল আসরে সময় কাটান।
বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলনের মুখে এবার শাহপরান (রহ.) মাজারে ওরস হলেও কোনো ধরনের নাচ গান ছাড়াই ওরস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মাঝে ভোরে আখেরি মোনাজাতের আগেই ৫/৭শ জন লোক লাল আলখেল্লাসহ পাগলের বেশ ধরে হামলা চালায়। মুসল্লিরা প্রতিহত করতে গিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে।
হযরত শাহপরাণ ছিলেন সোহরাওয়ারদিয়া এবং জালালীয়া বংশের একজন সূফী সাধক। বলা হয়ে থাকে ইয়েমেনের হাদরামুতে জন্মগ্রহণকারী হযরত শাহপরাণ (রহ.) ছিলেন হযরত শাহজালালের বোনের ছেলে। তিনি তার মামা হযরত শাহজালালের সাথে ভারতবর্ষে আসেন এবং ১৩০৩ সালে শাহজালালের নেতৃত্বে সিলেট অভিযানে অংশ নেন। সিলেট বিজয়ের পর শাহপরাণ (র.) সিলেট শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণগড় পরগণার খাদিমনগরে খানকাহ স্থাপন করে সূফী মতবাদভিত্তিক আধ্যাত্মিক চর্চা শুরু করেন। সিলেট অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post