পাসপোর্ট নিয়ে দেয়া হয় ইতালির ভিসা। এমনকি বিমানের টিকিটও অগ্রিম কাটা হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশনে গিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীরা জানতে পারেন সবই ভুয়া।
মাদারীপুরে এ ভাবে জাল ভিসা সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা একটি প্রতারকচক্র।
এই দালালচক্রের প্রতারণার শিকার যুবক ইভান খালাসী। দেড় বছর আগে তিনি সৌদি আবর থাকাকালে মোবাইলে কথা হয় মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার হরিদাসদি এলাকার বেলায়েত হাওলাদারের সাথে।
পরে সৌদি থেকে দেশে আসেন ইভান। কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাকে ইতালি পৌঁছে দেয়া হবে এমন শর্তে দালালদের হাতে তুলে দেন ১২ লাখ টাকা।
পরে তার পাসপোর্টে দেয়া হয় ইতালির ভিসা, একই সাথে বিমানের টিকিটও কাটা হয়। সম্প্রতি ইতালীর উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
শুধু ইভান খালাসী নন, এই দালালচক্রের প্রতারণার শিকার পাঠানকান্দির নাইম হাওলাদার, হরিদাসদির সফিকুল ইসলাম নয়ন, রায়হান হোসেনসহ অনেক যুবক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চক্রের মূল হোতা নোয়াখালীর কবিরহাট এলাকার আবুল বাশার সুমন।
তার সহযোগি বেলায়েত হাওলাদার। প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বেলায়েতের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে, অভিযোগের কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোতালেব হাওলাদারের। ভুক্তভোগী ইভান খালাসী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন বেলায়েত ও তার শাশুড়ি, আমি আমার টাকা ফেরত চাই, দালালচক্রের বিচার চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী রায়হান হোসেন বলেন, ‘বেলায়েত ও সুমনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক যুবক নিঃস্ব হয়েছেন। কেউ সুদে টাকা এনে, কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ এনে লাখ লাখ টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন ইতালি নিতে পারছেনা, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এর একটা প্রতিকার হওয়া দরকার।
অভিযুক্ত বেলায়েত হাওলাদারের বাবা মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ নেই। বেলায়েত কাকে কিভাবে কোথায় নিবে, সেটা আমি জানি না।’
বেলায়েতের শাশুড়ি আসমিনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে জামাই বেলায়েত টাকা নিতে বলেছে, আমি সেই টাকা ইভানদের বাড়িতে গিয়ে গ্রহণ করেছি। ইভান আমাদের আত্মীয়। টাকা নিয়ে ইতালি নেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আমার মেয়ে জামাই অন্য এক লোকের মাধ্যমে কথা বলেছিল, মূলত সেই লোক প্রতারণা করেছে। এই ঘটনায় ইভান আদালতে মামলা করেছে। এখন আমরা আদালতেই সবকিছুই বুঝবো।’
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন খান বলেন, ‘লোভে পড়ে যুবকরা বার বার প্রতারণার শিকার হচ্ছে। পরে বিচারের আশায় আদালতে মামলা করছেন কেউ কউ। যুবকরা যদি দালালদের কাছে না যায়, তাহলে প্রতারিত হবার কোনো সুযোগ নেই।’
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনায় মাদারীপুর আদালতে দায়ের করা একাধিক মামলা তদন্ত করছে গোপালগঞ্জ জেলার পিবিআই কর্মকর্তারা।
এছাড়া প্রত্যেকটি মামলা মাদারীপুর জেলা পুলিশ নিখুঁতভাবে তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অনেকে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুবকরা সচেতন হলে এই প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। সচেতনার বিকল্প কিছুই নেই।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post