ওমানে অবৈধপথে অর্থ প্রেরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার (৪-নভেম্বর) বিকাশের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিও)। বিবৃতিতে সিবিও জানিয়েছে, ওমান থেকে লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন দোকান থেকে বিকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর করা হচ্ছে। যা ওমানের আইন অনুসারে অবৈধ।
এমতাবস্থায় লাইসেন্সবিহীন এই জাতীয় অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে মানি ট্রান্সফার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ওমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ জাতীয় অর্থ লেনদেন ওমানের এন্টি মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরোধিতা (এএমএল) এর বিধান লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচিত হবে। আর এর সাজা হিসেবে তাকে কারাদণ্ড ও জরিমানা সহ বেশ কয়েকটি শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওমানের বৃহত্তম একটি মানি এক্সচেঞ্জের ম্যানেজার প্রবাস টাইমকে বলেন, “ওমান থেকে রেমিট্যান্সের গ্রোথ ভালো, তবে অবৈধ চ্যানেলে বিকাশের মাধ্যমে ওমান থেকে দেশে অর্থ পাঠানো দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওমান থেকে কয়েকটা এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে বৈধভাবে বিকাশ করলেও অধিকাংশই অবৈধভাবে বিভিন্ন দোকান থেকে এবং ব্যক্তিগত ভাবে বিকাশ করছে।”
আরও পড়ুনঃ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা পাবেন ২০০ কোটি টাকার ঋণ
তিনি আরো বলেন, “অনেক প্রবাসী মনে করেন, হুন্ডি/অবৈধ বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে এক্সচেঞ্জের অতিরিক্ত ফি দিতে হয়না এবং ব্যাংকেও যেতে হয়না। তবে হিসেব করলে দেখা যায় বৈধপথে টাকা পাঠালে প্রবাসীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। যেমন ধরুন, তারা সরকারের দেওয়া ২ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। কোনো কোনো ব্যাংকতো ৩ শতাংশ প্রণোদনাও দিচ্ছে। সেইসাথে দেশে যাওয়ার পর তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের স্টেটমেন্ট দিয়ে ব্যাংক থেকে লোণ সুবিধাও নিতে পারবেন।”
ওমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারিকৃত নোটিশঅবৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের ঝুঁকি নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “অবৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে যেমনিভাবে আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে, তেমনিভাবে ওমান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের আইন অমান্য করছে। ইতিমধ্যেই অনেক প্রবাসী ওমান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। হুন্ডি অথবা অবৈধ বিকাশের সাথে যারা জড়িত আছেন, তারা কখনো ওমান পুলিশের হাতে ধরা পরলে অনেক বড় ঝামেলার মধ্যে পরে যাবেন। কারণ, অবৈধপথে অর্থ স্থানান্তর করা অনেক বড় অপরাধ হিসেবে ধরা হয় ওমানে।”
আরো পড়ুনঃ ওমানের রহস্যময় নগরী সাদ্দাতের বেহেস্ত
এদিকে ওমানের বিভিন্ন অঞ্চলে খোজ নিয়ে জানাগেছে, দেশটির প্রতিটি অঞ্চলেই বাংলাদেশী বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ভাবে অনেক প্রবাসী জড়িত আছেন এই অবৈধ হুন্ডি/বিকাশ ব্যবসায়। ওমানের আল হিল অঞ্চল এবং মোবেলা সেন্ট্রাল সবজি মার্কেটের নিকটবর্তী বাংলাদেশী বাজার, সালালাহ, সোহার, গাদাবন, নেজুয়া, হামরিয়া, মাতরাহ, ইবরি, বুরাইমি, আল খুদ, বারকা, সুর, মোবেলা বিপি, মোবেলা সানাইয়া, সালালাহ সানাইয়া, আমরাত সহ ওমানের বেশকিছু অঞ্চল থেকে একাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রবাস টাইমের কাছে তথ্য এসেছে।
গোপন সূত্রে জানাগেছে, ইতিমধ্যেই ওমান সরকার চিরুনি অভিযান শুরু করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। গত এক সপ্তাহে শুধুমাত্র ওমানের সুর অঞ্চল থেকেই ৫ জন হুন্ডি ব্যবসায়ীকে আটক করেছে দেশটির রয়্যাল ওমান পুলিশ আরওপি। এ ছাড়াও অন্যান্য শহরের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা ইতিমধ্যেই দেশটির গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। বেশ কয়েকজন হুন্ডি ব্যবসায়ী দেশটির গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে।
সাদ্দাতের বেহেস্ত দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
এ ব্যাপারে ওমানের বিশিষ্ট প্রবাসীদের সাথে আলাপ করলে প্রবাস টাইমকে তারা বলেন, অনেকেই না যেনে এই অবৈধকাজে জড়িয়ে পরেন, তবে যারাই এই কাজে জড়িত আছেন, তাদের উচিৎ হবে এই মুহূর্তেই এই কাজ বন্ধ করে দেওয়া। অন্যথায় ওমান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে যেমনিভাবে তারা অনেক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তেমনিভাবে দেশের ভাবমূর্তিও কিছুটা ক্ষুণ্ণ হবে।
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post