আশরাফুল ইসলাম রানা, ঢাকা
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিরুদ্ধে প্রবাসী নির্যাতনের অভিযোগ থামছেই না। নতুন করে আরও এক প্রবাসীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে হাইকমিশনের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যদিও ওই দুই কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি অনেক চেষ্টা করেও হাইকমিশনের কারও বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী সবুজ (৩৮) নামে ওই প্রবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন আটকে থাকা পাসপোর্ট নিতে তিনি গিয়েছিলেন কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমমিশনে। এর আগে গত ১৫ মার্চ এ পাসপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেয়া হয়নি। এদিকে চলতি মাসের ত্রিশ তারিখ তার চাকরি নবায়ন করতে হবে। অথচ পাসপোর্ট নিয়ে গড়িমসির শেষই হচ্ছেনা বাংলাদেশ হাইকমিশনের।
সোমবার (২১-মার্চ) বিকেলে মারধরের শিকার সবুজ হাইকমিশনের ওই কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে রাতেই কুয়ালালামপুরের ডাংওয়াঙ্গি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পটুয়াখালী প্রবাসী সবুজ অভিযোগ করেন, মোবাইলে কথা বলাকে কেন্দ্র করে তার ওপর চড়াও হন হাইকমিশনের দুজন কর্মচারী। নির্দিষ্ট সময়ের পরও পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। পরে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে বেধড়ক পেটান দুজন কর্মচারী।
সবুজ বলেন, মারধর থেকে বাঁচতে হাতে পায়ে ধরেও শেষ রক্ষা হয়নি। এ সময় কাউকে জানালে পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন হাইকমিশনের ওই কর্মচারীরা। আহত সবুজ পরবর্তীতে সহকর্মীদের সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী কুয়ালালামপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
সবুজ আরও বলেন, ঘটনার পর হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নালিশ করলে তিনি এর সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে এ জন্য ক্ষমা চান। তবে বিনা অপরাধে গায়ে হাত তোলার এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে মধ্যরাতেই কুয়ালালামপুরের ডাংওয়াঙ্গী থানায় হাইকমিশনের এ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন সবুজ।
বিষয়টির বক্তব্য জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলরসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। লেবার কাউন্সিলরের হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক মেসেজ পাঠিয়ে উত্তর জানতে চাওয়া হয় কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। পরে তাকে সবুজের ভিডিওটি পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে মালয়েশিয়া প্রবাসী কর্মীর পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের এ ঘটনা নানান মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। শুধু মালয়েশিয়ার এই লেবার কাউন্সিলর নন, সংবাদের প্রয়োজনে নানা সময় বিভিন্ন দেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বাজে। তারা একেবারে সারাই দেন না। এতেই প্রমাণিত হয় বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কি ব্যবহার করেন।
অথচ এসব কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে প্রবাসীদের সেবা করার জন্য। তাদের স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণ, চাকচিক্যময় বাড়ি-গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন সবটাই আসে বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট ঘামে উপার্জিত পয়সায়।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী এ দেশের মালিক জনগণ। সরকার ও তার কর্মচারীরা জনগণের সেবক বা ভৃত্য। কিন্তু এ কর্মচারীর হাতে মালিকই চড় থাপ্পড় খাচ্ছে। এই চড় থাপ্পড়ের ঘটনা কেবল একটি নয়। এর আগেও মালয়েশিয়া হাইকমিশন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুয়েত দূতাবাস মিথ্যে মামলায় সাংবাদিককে জেল পর্যন্ত খাটিয়েছে। আর তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের তো শেষ নেই। এখন প্রশ্ন সবার একটাই- কর্মচারীর জিম্মি থেকে এদেশের মালিক জনগণ কবে মুক্তি পাবে?
সবশেষে মঙ্গলবার (২২-মার্চ) হাইকমিশন থেকে এই বিষয়ে একটি জরুরী নোটিশ জারী করা হয়, সেখানে বলা হয় “গতকাল ২১ মার্চ ২০২২ একজন প্রবাসী ভাই হাজার হাজার পাসপোর্টের মধ্য থেকে তার পাসপোর্ট খুঁজে বের করে ডেলিভারি পেতে দেরি হওয়ায় দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
এতে দূতাবাসের ২ জন অস্থায়ী কর্মচারীর সাথে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেবা প্রত্যাশীর সাথে অধৈর্য্যশীল আচরণের জন্য উক্ত দুইজন অস্থায়ী কর্মচারীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। উক্ত ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করছে।
উক্ত প্রবাসী ভাইয়ের পাসপোর্ট গতকালই ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি প্রচার করা ভিডিওতে সেটা বলেননি। কোন কোন মহল বিষয়টিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টায় লিপ্ত আছে। তার গায়ে কোন আঘাতের চিনহ দেখা যায়নি অথচ তার হাতে ভুয়া ব্যান্ডেজ লাগিয়ে পরবর্তীতে ছবি তুলে একটি মহল মিডিয়াতে ছেড়েছেন।
উক্ত মহলের ক্ষোভের কারণ এবং তাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে দূতাবাসের ধারণা আছে। তবে এই ঘটনাকে পুঁজি করে যাতে কেউ অপপ্রচারে লিপ্ত হতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন সকল পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনদের উন্নত সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর এবং সকল প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করছে।
ধন্যবাদান্তে- বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post