তখন বয়স চার বছর পেরিয়ে। সে বয়সের অনেক কিছুই মনে না থাকলেও একবার ঈদের নামাজ শেষে ফেরার পথে গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিলেন, সেই ঘটনা মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠেন জাহিদ হাসান, স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের কথা। কারণ, শিশুমনে এই ঘটনার প্রভাব দীর্ঘদিন ছিল। এই ঘটনার পর দীর্ঘদিন মানসিক ট্রমায় ছিলেন তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘সেটা খুবই ভয়ংকর ঘটনা। আমার জন্ম ১৯৬৭ সালে। ১৯৭১ সালের কথা বলছি। আমি তখন নানার বাড়িতে। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলায় তখন ঈদগাহে অল্প পরিসরে ঈদের নামাজ হচ্ছে। ঈদের নামাজটা পড়ে বাসার দিকে হাঁটছি আমি আর আমার ভাই ইকবাল হোসেন। ভাইয়ের বয়স তখন ছিল ৯ বছর। আমরা গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছি।
তখনো তেমন কোনো আতঙ্ক না থাকলেও কিছু দূর যাওয়ার পরে হঠাৎ করেই বুঝতে পারেন কোথায়ও কিছু হচ্ছে। বড় কোনো শব্দ এগিয়ে আসছে। ভয়ে দুই ভাই তখন বাঁশঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে যান। এমন সময় দেখতে পান মাথার ওপর দিয়ে প্লেন ঘুরছে। ‘শব্দ শুনে প্রথমেই দৌড়ে বাঁশঝাড়ের মধ্যে যাই। দেখি দুইটা প্লেন থেকে গুলি করছে। সেগুলো লেগে বাঁশঝাড়ের বাঁশগাছগুলো ঠাসঠাস পড়ে যাচ্ছে। আমরা যেদিক দিয়ে যাচ্ছি, সেদিক দিয়েও গুলি হচ্ছে। আমরা দুই ভাই দৌড়ে পালাই। আমরা একটা পুকুরের মধ্যে ছিলাম। স্বাভাবিক হলে উঠে আসি।’ বলছিলেন অভিনেতা জাহিদ হাসান।
এই অভিনেতা শৈশবের ভয়ংকর সেই স্মৃতি সম্পর্কে আরও বলেন, ‘এই স্মৃতি আমাকে অনেক দিন ভুগিয়েছে। এটা নিয়ে অনেক দুঃস্বপ্ন দেখতাম। আমার জ্বর হলে দেখতাম আমাকে অনেক বড় বড় প্লেন তাড়া করছে। আমি দৌড়াচ্ছি। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি এটা নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছি।’ ৭১–এর সেই ঈদে তখন বন্দী অবস্থায় খুবই বিপদগ্রস্ত ছিলাম। এই স্মৃতিটা আমাকে অনেক পেইন দিত। আমি ট্রমার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। আমার ভেতরে এই ভয়টা ঢুকে গিয়েছিল।
যুদ্ধ–পরবর্তী স্বাধীন দেশে শৈশবের ঈদ কেমন ছিল, জানতে চাইলে জাহিদ হাসান বলেন, ‘তখন আমরা থাকি সিরাজগঞ্জে। আমাদের ওইখানে একটা পাড়ার মতো ছিল। সব সময় ফুর্তিতে থাকতাম। সেখানে রোজার ঈদের আগের রাতে গরু জবাই হতো। গরুটা অনেকগুলো ভাগে কেনা হতো। কেউ দুই ভাগ, কেউ তিন ভাগ, কেউ এক ভাগ। তখন গরু জবাইয়ের ওইখানে লাইট থাকত। সেখানে আমাদের একটা কুস্তি প্রতিযোগিতা হতো। তা ছাড়া আমরা ঈদের চাঁদরাতে মিছিল করতাম। আমাদের মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘চাঁদ উঠেছে, উঠেছে, কিসের চাঁদ কিসের চাঁদ, ঈদের চাঁদ ঈদের চাঁদ’। আমরা সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে মিছিল করতাম। মশাল জ্বালানো হতো। মুখের ভেতর কেরোসিন দিয়ে ফুঁ দিতাম। এই সবই ছিল কিশোর জাহিদ হাসানের ঈদের আগের রাতের স্মরণীয় ঘটনা।
ঈদের সময়ের মজার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে জাহিদ হাসান বলেন, ‘ঈদের ওই সময়ে ক্লাস সিক্স, সেভেনে পড়ি। তখন একটা ফ্যাশন আসছিল একদম পাতলা সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া। যে শার্টের পকেটে এক টাকা, ৫ টাকার নোট রাখলে দূর থেকে দেখা যেত। এই শার্ট পরে ঘুরতাম।’
জাহিদ হাসান জানান, মা–বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন সিরাজগঞ্জে ঈদ করেছেন এই অভিনেতা। এখন পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করেন। মাঝেমধ্যে রাস্তাতেও বের হন। ঘুরতে বেশ ভালোও লাগে তাঁর। এবারও পরিবার নিয়ে ঢাকাতে ঈদ করবেন, এমনটাই জানালেন জাহিদ হাসান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
