বাংলাদেশের মানুষ এখন গড়ে ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের তুলনায় বেশি আয় করেন। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। অথচ দুই দশক আগেও ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি এবং অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় পড়েনি। যদিও প্রবৃদ্ধি ধীর ছিল, তবে গত দুই দশকে দেশের মাথাপিছু আয় দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় মাথাপিছু আয়ে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, এমনকি মায়ানমারের চেয়েও এগিয়ে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়িয়েছে ২,৬২১ ডলার, যা ভারতের ২,৬১২ ডলারের চেয়ে বেশি। এই সাফল্যের সূচনা হয় ২০২০ সালে, যখন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ে এগিয়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১,৬৫৯ ডলার, আর পাকিস্তানের ছিল ১,৪৬৮ ডলার। ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি পৌঁছেছে মাত্র ১,৪৭১ ডলারে, যা বাংলাদেশ থেকে অনেক পিছিয়ে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে নিম্ন আয়ের তালিকায় থাকা ৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৩৯টি দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশে নেমে আসলেও, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা পুনরায় ৭.১ শতাংশে পৌঁছায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধি ধীর হয়েছে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৪ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ভুটানের মাথাপিছু আয় ৭২০ ডলার থেকে বেড়ে ৩,৭৪০ ডলারে পৌঁছেছে, যা ৪১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। একই সময়ে নেপালের আয় বেড়েছে ৫২৩ শতাংশ এবং মায়ানমারের আয় বেড়েছে ৫৩৭ শতাংশ। তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম।
বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, বেশ কিছু স্বল্প আয়ের দেশ এখনও ঋণ সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ধারা এই অঞ্চলে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
আগামী ১৪ জানুয়ারি প্রকাশিতব্য বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে আরও বিশদ বিশ্লেষণ থাকবে, যা বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে আরও পরিপ্রেক্ষিত দেবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি শুধুমাত্র পরিসংখ্যানে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও তা উল্লেখযোগ্য। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আরও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post