বাংলাদেশি জনশক্তির বড় সুখবর হতে যাচ্ছে সৌদি বিশ্বকাপ ২০৩৪

Saudi arabia world cup 2034 is going to be big news for bangladeshi manpower

ফিফার প্রেসিডেন্ট ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণায় শুধু সৌদি ফুটবলপ্রেমীরাই আনন্দিত নন, বরং এটি দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের এক অনন্য উপলক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পর্যটন ও খেলাধুলার মতো খাতে সৌদি সরকার বহুদিন ধরেই বড় পরিসরে বিনিয়োগ করে আসছে। আন্তর্জাতিক তারকা ফুটবলারদের আকৃষ্ট করাও এই কৌশলের অংশ। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে পরিচালনার নজির দেখিয়ে সৌদি আরব তার সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অধীনে সৌদি আরব ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে—যেমন নিওম, দিরিয়াহ ও কিং সালমান পার্ক। এই প্রকল্পগুলো শুধু অর্থনীতির বহুমুখীকরণ নয়, বরং পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক সৌদি গড়ার রূপরেখা দিচ্ছে। ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজন দেশটিতে বিপুল পরিমাণ দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা তৈরি করবে, যা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বড় একটি সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত। তবে প্রযুক্তির বিকাশ এবং কড়াকড়ি শ্রমনীতির কারণে অদক্ষ কর্মীদের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, যেমন কাতার বিশ্বকাপে নির্মাণে বাংলাদেশের বিশাল অংশগ্রহণ থাকলেও অধিকাংশই ছিল নিম্নপর্যায়ের কাজ। ভাষাগত দুর্বলতা ও দক্ষতার অভাবেই বাংলাদেশি কর্মীরা উচ্চপর্যায়ের পেশায় জায়গা করে নিতে পারেননি।

বিশ্বকাপ সামনে রেখে সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের প্রসারে হোয়াইট-কলার চাকরির সুযোগ বাড়বে। হোটেল ব্যবস্থাপনা, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও প্রকৌশল—সব খাতেই চাহিদা বাড়বে দক্ষ জনবলের। বাংলাদেশি তরুণরা যদি সঠিক প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে, তবে তারা ট্যুর গাইড, রিসেপশনিস্ট, আইটি সাপোর্ট, এমনকি প্রকৌশল খাতেও উচ্চমানের পেশা পেতে পারেন। এতে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহও বহুগুণে বাড়বে।

তবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে এখনই সময়োপযোগী ও কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে জাতীয় পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি নিতে হবে, যেখানে সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে ড্রাইভিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল, কনস্ট্রাকশন ডিজাইন, আইটি ও স্বাস্থ্য সহকারীর মতো খাতে। একই সঙ্গে বুয়েট ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সৌদি মেগা প্রকল্পগুলোর সংযোগ স্থাপন করে ইন্টার্নশিপ ও সরাসরি নিয়োগের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে।

বাংলাদেশি তরুণদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ভাষাগত দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক কর্মপরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে সৌদি বিশ্বকাপ ঘিরে তৈরি হওয়া এই সুবর্ণ সুযোগকে আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপান্তরমূলক ধাপে রূপ দিতে পারি। এখনই সময়, সঠিক সিদ্ধান্ত ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার।

আরও দেখুন:

whatsappচ্যানেল ফলো করুন

প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।

Gif final ezgif.com optimize