ভারতের দীর্ঘকালীন প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের পথে এগোচ্ছে নেপাল।
চতুর্থবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কেপি শর্মা ওলি এবার বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ নতুন গতি আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে নেপালকে একটি ‘স্থলবেষ্টিত’ দেশ থেকে ‘স্থল-সংযোগপূর্ণ’ (ল্যান্ড-লিঙ্কড) দেশে রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ওলির বৈঠকে নেপালের উন্নয়নে চীনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন শি।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণে চীন আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
তবে ওলির চীন সফরে উল্লেখযোগ্য নতুন কোনো বিনিয়োগের ঘোষণা আসেনি, বরং পূর্ববর্তী চুক্তিগুলো পুনরায় স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারত নয়, চীনকে অগ্রাধিকার দেন ওলি। ঐতিহাসিকভাবে ভারতের উপর নেপালের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নির্ভরশীলতা থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে নেপালের দুই-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়, যেখানে চীনের অংশ মাত্র ১৪ শতাংশ। তবে চীন নেপালকে ৩১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে, যা ভারতের তুলনায় ৩০ মিলিয়ন ডলার বেশি।
২০১৬ সালে ভারতের ছয় মাসের তেল অবরোধের পর ওলির নেতৃত্বেই চীনের সঙ্গে একটি পেট্রোলিয়াম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা নেপালের জন্য বিকল্প সহযোগিতার দ্বার খুলে দেয়।
নেপাল ২০১৭ সালে চীনের বিআরআই প্রকল্পে যোগ দেয়। যদিও এই প্রকল্পের আওতায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, তবে সড়ক উন্নয়ন এবং নতুন পরিবহন করিডোর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনের সহায়তায় পোখারায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে ২১৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছে। যদিও এটি কার্যক্রম শুরু করেছে, ভারতের আকাশপথ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নেপালের রাজনৈতিক মহলে চীনা ঋণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকটের উদাহরণ সামনে রেখে নেপাল এখন চীনের প্রকল্পগুলোর জন্য অনুদানকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চীনের ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর পরিবর্তে অনুদানের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অতীতে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপাল এখন আরও স্বাধীন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যেতে চায়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে দেশটি নিজস্ব সার্বভৌমত্বকে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post