কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার। এ ছাড়া রয়েছে মনোবাসনা পূর্ণ করতে বিভিন্ন চিরকুট। এবার ৩ মাস ১৪ দিন পর দানবাক্সটি খোলা হয়েছে। এতে জীবনসঙ্গী হিসেবে এক সৌদি নাগরিককে পেতে চিঠি লিখেছেন এক ব্যক্তি।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্যাংক থেকে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। সঙ্গে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গয়না।
দানবাক্সে পাওয়া জীবনসঙ্গী হিসেবে এক সৌদি নাগরিককে পেতে চাওয়া নামপরিচয়হীন ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে—
আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় পাগলা মসজিদ,
আমি একজন সৌদিয়ানকে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ তুমি তাদের আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করিতে পারি। (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে রব, তুমি আমাকে নবীর দেশে-পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ, আমি যেন আবার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করিতে পারি। (আমিন)। আমি যেন পড়ালেখাই ভালো হতে পারি, আমার পরিবারে যেন শান্তি বয়ে আসে। (আমিন) আমি যেন হালাল রুজি রোজগার করিতে পারি (আমিন)। হে রব – হে মহান আল্লাহ তোমার কাছে দুই হাত তুলিয়া চাহিতেছি তুমি আমাকে মক্কাবাসীর ভালো এক উত্তম, দ্বীনি সুদর্শন লোকের সহিত বিবাহ করিয়ে দাও (আমিন।) যে, আমার চিঠিখানা পড়িয়াছেন আমাদের জন্য দোয়া করবেন, নেক আশা করিয়া চিটিখানা লিখেছি।
ইতি তোমার পাপী বান্দা।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
এর আগে, গত ১৭ আগস্ট এমন একটি চিরকুট পাওয়া যায় পাগলা মসজিদের দান বাক্সে। যেখানে একজন প্রেমিকা মুসলিম হয়েও খ্রিষ্টান ছেলেকে জীবনসঙ্গী করে পেতে চিঠি লেখেন। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আসসালামু আলাইকুম হুজুর। আমার নাম আফরোজ আক্তার সেজুতি, আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি, সারাদিন তার চিন্তা আমার মাথায় ঘুরে। ওর কথা মনে পড়লে অনেক কান্না আসে । আমি আমার পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারি না। ও আমার ব্যাপারে কিছুই জানে না আমি ওর ব্যাপারে সব জানি। ও খ্রিষ্টান আমি মুসলমান, আমি আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করি প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বলি যাতে ও মুসলমান হয়ে যায়, আমি চাই ও আমার জন্য হালাল হয়ে যাক। আল্লাহ ওকে আমার জন্য হালাল করে দেন, আমি ওর প্রতি দুর্বল ওকে কিছুতেই ভুলতে পারি না আমি, ভুলতেও চাই না আমি ওর প্রতি অনেক অনেক দুর্বল, আমার অনেক ভয় লাগে ওকে নিয়ে যে ও যাতে অন্য কারো হয়ে না যায়। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন তকদিরে দিয়ে, দোয়া করবেন। আপনি আমার সালাম নেবেন।’
এরও আগে, গত ২০ এপ্রিল সাইফুল ইসলামের নামের এক প্রেমিক চিঠি লেখেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি কিন্তু মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে না। আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে আল্লাহ তাকে যেন আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে কবুল করেন। মেয়েটার নাম মোছা. পারভীন আক্তার ও আমার নাম সাইফুল ইসলাম। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে কবুল করেন।’
এমন আরেকটি চিরকুটে লেখা, ‘আল্লাহ আমি যেন একটা মানসম্মত নাম্বার পাই একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারি। আমার মাথার সব খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ আমার মা-বাবারে ভালো রাখেন। আমি যেন রফিকুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হতে পারি।’
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনারা জানেন, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্যতম একটি জায়গা। সব ধর্মের মানুষ এখানে দান করে থাকে। আশা করা যাচ্ছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। তাদের দানের অর্থ দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ কমপ্লেক্স করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post