মানিকগঞ্জের ভাড়াড়িয়া বাজারে সরকারি খাস জমিতে দোকান নির্মাণের অভিযোগে উঠেছে সায়েম খান নামে এক গ্রিস প্রবাসীর বিরুদ্ধে। পরে খবর পেয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে ভাড়াড়িয়া বাজার এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেন দোকান নির্মাণকারী সায়েম খানসহ তার পরিবার। পরে সাত দিনের মধ্যে সরকারি খাস জমি থেকে দোকান নির্মাণের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয় প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া বাজারের সরকারি খাস জমি দখল করে ৮ থেকে ১০টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে বিগত ২০২১ সালের দিকে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে খাস জমি উদ্ধারে তৎপর হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ওই সময় খাস জমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য দুইবার দোকান মালিকদের নোটিশ দয়ে প্রশাসন। পরে ব্যবসায়ীরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে উচ্ছেদ অভিযান স্থবির হয়ে পড়ে। প্রায় দুই বছর আগে সরকারি খাস জমি দখল করে রাতারাতি দোকান নির্মাণ করেন গ্রিস প্রবাসী সায়েম খান। পরে ওই সময় ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মৌখিকভাবে বাধা দেন। কিন্তু নিষেধ অমান্য করেই দোকান নির্মাণ করা হয়। পরে কে বা কারা সায়েম খানের দোকান ভেঙে দেয় তা স্পষ্ট নয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগে প্রবাসী সায়েম খান আবারও সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন। প্রবাসী সায়েম খানের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির করতো বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে প্রবাসী সায়েম খান বলেন, এখানে আমার খরিদ করা জমি রয়েছে। আমি সেখানেই দোকান নির্মাণ করছি। আমি একজন প্রবাসী, আমাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়েই দেশ চলে। খাস জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাগজপত্র সবই আছে, খাজনা-খারিজও আছে। খাস জমি দখল করেনি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ভাড়ারিয়া বাজার হরিরামপুর আর সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত। সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া মৌজায় ৩০০২ নং দাগে সরকারি খাস জমি দখল করে ৮ থেকে ১০টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন দখলদাররা। তাদের নামের তালিকা এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসক অফিসে দেওয়া আছে। তবে ভাড়ারিয়া ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব বাধা দিলেও তা মানেন না দখলদাররা। নতুন করে সায়েম খান নামের এক প্রবাসী খাস জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করছেন। পরে নায়েব মৌখিকভাবে নিষেধ করলে তারা নায়েবকে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন। আমি প্রতিবেশী দোকানদার কথা বলায় তারা আমার নামে মিথ্যা মামলা দেন। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই যাতে কেউ সরকারি জমি দখল করতে না পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম বলেন, ভাড়ারিয়া বাজারের একটি অংশ হরিরামপুর উপজেলা ও আরেকটি অংশ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় পড়েছে। সীমানা ঘেঁষা একটি সরকারি খাস জায়গায় দোকানের নির্মাণের অভিযোগ উঠলে প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা দোকান নির্মাণ করতে নিষেধ করেন। সায়েম খান নামের এক গ্রিস প্রবাসী ওই জায়গার মালিকানা দাবি করেন এবং নিষেধ না মেনে নির্মাণকাজ চালিয়ে যান।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সরকারি কাজে সায়েম খান, তার মা, ভাইসহ পরিবারের লোকজন বাধা দেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় তাকে সরকারি খাস জায়গা থেকে সাত দিনের মধ্যে নির্মাণাধীন দোকান সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে দোকান নির্মাণের দায়ে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে মামলা দায়ের করা হবে। সরকারি খাস জমি রক্ষার্থে এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
অভিযান পরিচালনায় পুলিশ, ভাড়ারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম-পুলিশ এবং ভাড়ারিয়া বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহযোগিতা করে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post