করোনার ভারতীয় ধরন আরও ভয়ংকর উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৯ মে) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পূর্বাচল প্রকল্পে ‘মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত’ এ দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১ হাজার ৪৪০টি প্লট বরাদ্দপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির সময় আপনারা মাস্ক পরে থাকবেন, সাবধানে থাকবেন। কারণ নতুন একটা ভাইরাস এসেছে, এটা আরও বেশি ক্ষতিকর, যাকে ধরে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়। যারা বিক্ষিপ্তভাবে ঈদে বাড়ি ফিরছেন তারা গ্রামে থাকা স্বজনদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলতে যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, জানি ঈদের সময় মানুষ পাগল হয়ে গ্রামে ছুটছেন, এই যে, আপনারা একসঙ্গে বাড়ি যাচ্ছেন, চলার পথে- ফেরিতে হোক বা গাড়িতে হোক, আর লঞ্চে হোক কার যে করোনাভাইরাস আছে আপনি জানেন না। সুতরাং আপনি সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার পরিবারের কাছে। মা-বাবা, দাদা-দাদি ও ভাইবোন যারাই থাকুক বাড়িতে আপনি কিন্তু তাদের সংক্রমিত করবেন। তাদের জীবনটাও মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলে দেবেন আপনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ঈদে নিজের ঘরে থাকতে কী ক্ষতিটা হয়? কাজেই ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন, সেখানে থাকেন। সেখানেই নিজের মতো করে ঈদটা উদযাপন করেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। কাজেই আগে থেকে আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। আমাদের সেভাবেই চলতে হবে যেন আমরা সবাই করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম পর্যায়ের কেউ যদি ফ্ল্যাট নিতে চায়, তাদের জন্য পল্লী জনপদ নামে একটা প্রকল্প নেওয়া আছে। সেখান থেকে তারা ফ্ল্যাট কিনতে পারবে এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারবে। সেইভাবে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। বিত্তশালীরা প্লট কেনেন। ভালো ভালো দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর বানান। পূর্বাচল যখন হলো, তখন আমরা দেখেছি। গুলশান-বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের আছে, তাদের পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে ইজ্জতই থাকে না। এরকম কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি। যাদের এত বিশাল বিশাল বাড়ি-ঘর অট্টালিকা রয়েছে, তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে কবরের সাড়ে তিন হাত জায়গায়। ধনসম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা সত্যিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। আমার সবসময় একটা প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। জমি দিয়েছিলেন, কিন্তু প্লট পাবেন না, এটা হতে পারে না। আমার কাছে একটা প্রস্তাব আসে পূর্বাচলে জাতির পিতার একটা স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি টাওয়ার। আমি কিন্তু সেটার অনুমোদন করিনি। সেই ফাইলেই লিখে ছিলাম। আগে এখনকার আধিবাসী যারা, তারা তাদের প্লট পাবে। তারপর আমি এই প্রকল্প অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেব না। কীভাবে সেই প্লট বের করবে সেটা মন্ত্রণালয় ও রাজউক খুঁজে বের করে। সেই নির্দেশনা আমি দিয়েছি।
তিনি বলেন, এই শহরটা গড়ে তোলার জন্য বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। আমি বলেছি সেগুলো বাদ দিতে হবে। আগে প্লট তৈরি করতে হবে। দরকার হলে আরও জমি নিয়ে প্লট দিতে হবে। যাদেরকে কথা দেওয়া হয়েছে, সেই কথা রাখতে হবে। এর আগে কোনো প্রকল্প আমি অনুমোদন করব না পূর্বাচলে। আপনাদের হাতে প্লট তুলে দিতে পেরেছি। এটা হলো সবচেয়ে বড় কথা। আর বঞ্চিত থাকলেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার কাছে অনেকেই মেসেজ পাঠাতো। সেগুলো আমি পড়তাম। আমি চেষ্টা করতাম। বড়লোকদের দৌরাত্ম্য বেশি থাকে। সেখানে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও অনেক কষ্ট করে এই কাজটা করা হয়েছে। আপনাদের হাতে সেটা তুলে দিতে পেরেছি সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবসহ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেটুকু যেভাবে পারি মানুষকে মাথাগোঁজার ঠাঁই আমরা করে দেব। প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। প্রতিটি মানুষই লেখাপড়া শিখবে। সেটা শুধু কিতাবি পড়া না, সেটা কারিগরি শিক্ষা হতে পারে। শুধু বিএ, এমএ পাশ করে চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেরা চাকরি দিতে পারে, সেইভাবে নিজেদের কাজ করতে হবে। আমরা সেইভাবে দেশের যুবসমাজকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post