আবারো সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ঢাকা। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে বিক্ষোভ করে। এতে সকল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার প্রবেশমুখগুলো আন্দোলনকারীদের দখলের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঢাকার ভিতর থেকে কোনো যানবাহন বাইরে যেতে পারেনি এবং দেশের অন্য স্থান থেকেও কোনো যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারেনি। একাধিক এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলে দলে শিক্ষার্থীরা এসে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এতে করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যানচলাচল। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের আবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, সাইন্সল্যাব, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, নতুন বাজার, আফতাবনগর, কুড়িল বিশ্বরোড, মিরপুর-১০ ও উত্তরায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান জানান, সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় এখনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। পাশেই পুলিশের সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তারা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সড়ক দখল করেন। দুপুর ১টার দিকে আশপাশের এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে একটি মিছিল নিয়ে প্রগতিসরণীতে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আশপাশে ছড়িয়ে থাকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিলে অংশ নেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে রাস্তা দখলে রেখেছেন। রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করছেন শিক্ষার্থীরা। রামপুরা-বাড্ডার সড়কে সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় এই সড়কে সকল যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর ১২টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। এ বিক্ষোভে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামতে দেখা যায় জনতার ঢল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছেন পথচারী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনগণ। এ আন্দোলন ঘিরে পুরো সায়েন্সল্যাব এলাকার সড়ক আন্দোলনকারীদের অবস্থানে বন্ধ হয়ে যায়।
রাজধানীর মিরপুর-১০ গোল চত্ত্বরে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে সড়ক ছেড়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্ত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। রামপুরা বনশ্রী এলাকার ইউলুপ থেকে ডি ব্লক আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত ও দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় দশতলা থেকে ফালগুনি চেক পর্যন্ত ও মেরাদিয়া হাট থেকে কাজী বাড়ি সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থী সড়কে গ্রাফিতি আকছেন ও শান্তি প্রিয় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ, অভিভাবকসহ ছোট- বড় সব বয়সের মানুষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে বিক্ষোভ ও মিছিল শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবককে যোগ দিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে স্বল্প যান চলাচল করলেও এ সময় তাও বন্ধ হয়ে যায়। শান্তিনগর চৌরাস্তার মোড়ে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আশেকপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। দুপুর থেকে তারা ঢাকার প্রবেশমূখ দখল করেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর থেকে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এ সময় আন্দোলকারীদের ওপর গুলি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে সেøাগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। দুপুরে মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আঞ্চলিক কিংবা দূরপাল্লার গাড়ির সঙ্কট থাকা মহাসড়কে অটোরিকশাকে যানবাহনের জন্যে বেছে নিয়েছেন প্রয়োজনে থেকে বের হওয়া মানুষ। কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ ছিলো।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছেন সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবরোধ করে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। ৯ দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাভারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হতে থাকেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন তারা। এদিকে ধামরাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ জনতার একটি বিক্ষোভ মিছিল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা থেকে আশুলিয়ার নয়ারহাট এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। পরে তারা নয়ারহাট থেকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটায় ফিরে মহাসড়কে অবস্থান নেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post