বাংলাদেশে গত বছর রেমিট্যান্স এসেছে ২২ দশমিক ১৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত বছর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে তিন শতাংশের বেশি।
তবে এ রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষত গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এ ব্যয় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্বব্যাপী অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ‘দ্য গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ তথা নোমাদ-এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী এ সংস্থাটির ‘রেমিট্যান্স সেøাড ইন ২০২৩, এক্সপেক্টেড টু গ্রো ফাস্টার ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০০ ডলার পাঠানোর তুলনামূলক ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় গত বছর শেষ প্রান্তিকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় বেড়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয়। এছাড়া বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় রেমিট্যান্স পাঠানোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচটি রুটের মধ্যে তিনটিই বাংলাদেশের।
এগুলো হলো সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে ২০০ ডলার পাঠাতে খরচ ছিল আট শতাংশ তথা ১৬ ডলার।
গত বছর শেষ প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ তথা ২৩ দশমিক ৪ ডলার। অথচ সিঙ্গাপুর থেকে ভারতের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম।
গত বছর ভারতের প্রবাসীদের এ রুটে ২০০ ডলার পাঠাতে খরচ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৬ শতাংশ তথা পাঁচ দশমিক ২ ডলার। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর থেকে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে সাড়ে চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ২০০ ডলার পাঠাতে খরচ ছিল সাড়ে আট শতাংশ তথা ১৭ ডলার।
গত বছর শেষ প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ তথা ২৪ দশমিক ২ ডলার। অথচ মালয়েশিয়া থেকে ভারতের বা নেপালের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। গত বছর তা আরও হ্রাস পেয়েছে।
ভারতের প্রবাসীদের এ রুটে ২০০ ডলার পাঠাতে গত বছর শেষ প্রান্তিকে খরচ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ২ শতাংশ তথা চার দশমিক ৪ ডলার।
আর নেপালের প্রবাসীদের এ রুটে খরচ হয়েছে দুই দশমিক ৫ শতাংশ তথা পাঁচ ডলার। অর্থাৎ মালয়েশিয়া থেকে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে সাড়ে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। নেপালের তুলনায় বেশি ব্যয় হচ্ছে চার দশমিক ৮৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে ইউএই থেকে বাংলাদেশে ২০০ ডলার পাঠাতে খরচ ছিল পাঁচ শতাংশ তথা ১০ ডলার। গত বছর শেষ প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ তথা ২৭ দশমিক ২ ডলার। অর্থাৎ খরচ এক লাফে পৌনে তিনগুণ হয়ে গেছে।
অথচ ইউএই থেকে শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। গত বছর শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের এ রুটে ২০০ ডলার পাঠাতে খরচ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৫ শতাংশ তথা পাঁচ ডলার। অর্থাৎ ইউএই থেকে শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রায় ছয়গুণ ব্যয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ রেমিট্যান্স আসে বিদেশি একচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে।
মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের তেমন কোনো একচেঞ্জ হাউজ নেই। তাই বিদেশি একচেঞ্জ হাউজের ওপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য প্রায় সবাই তাদের ইচ্ছেমতো খরচ বৃদ্ধি করে।
এতে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি মধ্যপ্রাচ্যে এক্সচেঞ্জ হাউজ বাড়াতে। তখন রেমিট্যান্স আসার ব্যয় অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর রেমিট্যান্স আহরণে বিশ্বে সপ্তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ২০৬ বিলিয়ন ডলার।
এরপর ২০২২ সালে তা তিন দশমিক ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৫০৫ বিলিয়ন ডলার। তবে গত বছর তা আবার তিন দশমিক ০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে প্রথম রেমিট্যান্স প্রবাহ পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০০৬ সালে। এর তিন বছরের মাথায় ২০০৯ সালে তা ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর জন্য ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়। ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ২৯৬ বিলিয়ন ডলার। তবে পরের দুই বছর (২০১৬ ও ২০১৭ সাল) তা আবার ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যায়।
২০১৮ সালে আবারও রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩৬৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তা ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
ওই বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৭৫২ বিলিয়ন ডলার। মূলত করোনার কারণে অনেক প্রবাসী তাদের সঞ্চিত অর্থ দেশে পাঠাতে শুরু করায় পরপর দুই বছর উচ্চ রেমিট্যান্স আসে। এতে ২০২১ সালে তা ২২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post