শবে কদর বা লাইলাতুল কদর ইসলামের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত। এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। শবে কদরের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে। এ সুরায় বলা হয়েছে—‘লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতে ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (দেখুন সুরা কদর: ১-৫)
এই মহান রাতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ-দোয়া ও জিকির-আজকারসহ প্রত্যেকটি নেক আমলের সীমাহীন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)
শনিবার (৬ এপ্রিল) সূর্যাস্তের পর থেকেই ২৭ রমজানের রাত শুরু। এটি বিজোড় রাত। সেই হিসেবে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে কদরের সম্ভাবনা রয়েছে। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭)
নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী আজকের রাতেও শবে কদর তালাশ করতে হবে। শবে কদর তালাশ করা মানে বিশেষ ফজিলত লাভের আশায় ইবাদতে আত্মমগ্ন থাকা এবং সম্পূর্ণ গুনাহমুক্ত থাকা।
জোড় রাতেও শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। গত শতাব্দির প্রখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিস শায়খ ইবনু উসাইমিন (রাহ.)-ও বলেছেন, জোড়-বেজোড় যেকোনো রাতেই কদর হতে পারে। (শারহুল মুমতি: ৬/৪৯২)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহ.) একটি বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে বলেছেন, যদি রমজান মাস ৩০ দিনে হয়, তবে শেষ দশকের জোড় রাতগুলোতেও কদর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, যদি রমজান মাস ২৯ দিনের হয়, তাহলে উক্ত হাদিস অনুযায়ী কদরের রাত পড়বে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে। অতএব, ঈমানদারদের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা। (মাজমুউ ফতোয়া: ২৫/২৮৪-২৮৫
শবে কদর পেতে নবীজি যা করতেন
আমরা হাদিসে দেখি, নবীজি শুধু বেজোড় রাতে নয়, শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই ইবাদত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) (রমজানের) শেষ দশকে যে পরিমাণ আমল করতেন, অন্যকোনো সময়ে সে পরিমাণ আমল করতেন না।’ (মুসলিম: ২৬৭৮)
তবে, সন্দেহ নেই যে, কদরের রাত জোড় রাতের চেয়ে বিজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আবার বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭ রমজান এগিয়ে। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস এসেছে। তবে আমরা শুধু ২৭ রমজান নয়, প্রত্যেক বিজোড় রাতকেই গুরুত্ব দেবো, আবার জোড় রাতগুলোতেও অবহেলা করবো না।
মুহাদ্দিসগণ বলেন, লাইলাতুল কদরের রাতটি গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো, যাতে মানুষ শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই কদরের রাত মনে করে ইবাদত করে। হাদিসেও এমনটি এসেছে যে, নবীজিকে কদরের রাতটির কথা তার অন্তর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, ফলে তিনি সেটি ভুলে যান। তখন তিনি বলেন, ‘হয়ত এর মধ্যেই তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।’ (বুখারি: ২০২৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post