ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরে হামলা শুরু করার পর থেকেই ২ লাখেরও বেশি নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে গোষ্ঠীটি হামলা চালিয়ে আসছে বলে জানান তাদের মুখপাত্র।
সুয়েজ খালে যাওয়ার পথে বাব আল–মান্দেব প্রণালিতে ইসরায়েলগামী পণ্যবাহী জাহাজে হামলা করছে হুতি বিদ্রোহীরা। বিশ্লেষক এবং গোষ্ঠীটির বিবৃতি অনুসারে, ইয়েমেনে হুতিদের ব্যাপক সমর্থন ও রাজনৈতিক মূলধন থাকায় লাখ লাখ নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করতে পেরেছে গোষ্ঠীটি। হুতিদের দলে যোগ দেওয়ার এ ঢল ইয়েমেনের রাজনৈতিক দৃশ্যপট মারাত্মকভাবে বদলে দিতে পারে এবং প্রায় এক দশক ধরে চলা ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে যুদ্ধবিরতির যেকোনো সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে পারে।
হুতিরা এখন তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করেছে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্ত জাহাজগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে। এ পশ্চিমা জোট ইয়েমেনে হুতি অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে হুতি আক্রমণের আশঙ্কা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তা সত্ত্বেও ইয়েমেনের নিউজ নেটওয়ার্ক সাবার তত্ত্বাবধানকারী হুতি কর্মকর্তা নাসর আল–দিন আমের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, একটি চুক্তি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, ‘এখনো শান্তির সুযোগ আছে। আমাদের পক্ষ থেকে, আমরা জায়নবাদী, আমেরিকান এবং ব্রিটিশ শত্রু ছাড়া অন্য কোনো দলকে আক্রমণ করতে চাই না। কারণ তারা আমাদের আক্রমণ করছে। কোনো অভ্যন্তরীণ দলকে লক্ষ্যবস্তু করার আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই, যদি না তারা জায়নবাদীদের সমর্থন করতে আমাদের লক্ষ্যবস্তু করে।’
সানা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক আবদুল ঘানি আল–ইরিয়ানি আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইয়েমেনিরা ফিলিস্তিনি ইস্যু সম্পর্কে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ আর বিষয়টি হুতিদের বেশ কাজে লাগে।’ রাজনৈতিক ভাষ্যকার হুসেইন আলবুখাতি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যু সম্পর্কে আবেগের কারণে এ নিয়োগের সংখ্যা ‘প্রতি ঘণ্টায়’ বাড়ছে’। হুসেইন আলবুখাতির ভাই মোহাম্মদ হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য।
আল–ইরিয়ানি তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন হুতি যোদ্ধাদের সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি বলে অনুমান করেন। তিনি বলেন, ‘এমনকি হুতিরা যতক্ষণ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়াবে, কট্টর শত্রুরাও তাঁদের সঙ্গে থাকবে।’
হুতিরা গত নভেম্বরে লোহিত সাগরে তাদের তৎপরতা শুরু করে। এরপর শিগগিরই নতুন যোদ্ধারা এ গোষ্ঠীতে যোগ দিতে শুরু করে। এদের মধ্যে অনেকে এই ধারণায় যোগ দেয় যে, তারা ইসরায়েল বা তাদের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হবে। গত ১১ জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে ‘আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল’ স্বাভাবিক করার জন্য একটি জোট গঠন করে এবং হুতিদের অবস্থানে হামলা শুরু করে।
গবেষকেরা বলছেন, মার্কিন জোটের এই হামলা হুতি গোষ্ঠীতে যোগদান করতে দ্বিতীয় দফায় উৎসাহ দিয়ে থাকতে পারে। তবে এ নিয়োগ প্রথম দফার মতো তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। প্রতিবেদন অনুসারে, ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার যোদ্ধাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post