ভ্রমণ, জীবনের এক আনন্দময় অধ্যায়। নতুন নতুন জায়গা দেখা, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া, নতুন নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা – এ সবই ভ্রমণের মাধ্যমে সম্ভব। ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে পারি, নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকে দেখতে পারি। ভ্রমণের মধ্য দিয়েই দূর হয় প্রত্যাহিক জীবনের ক্লান্তি। আর এই ভ্রমণকেই আরও সহজ করার জন্য আবিষ্কার হয়েছে বিমানের। যার ফলে মুহূর্তেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটে যাওয়া যায়।
কিন্তু যদি অবতরণ করার সময় বিপজ্জনক বিমানবন্দরের মুখোমুখি হতে হয় তাহলে কেমন হবে? হতে পারে নতুন আরেক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার! চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বের সবেচেয়ে বিপজ্জনক কিছু বিমানবন্দরের নাম।
ফ্রান্সের কুরশেভেল বিমানবন্দর
কুরশেভেল বিমানবন্দর সমুদ্র সমতল থেকে ৬ হাজার ৫৮৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই একের পর এক পাহাড় ডিঙাতে হয় উড়োজাহাজকে।
এই বিমানবন্দরের রানওয়েটি ১ হাজার ৭৬১ ফুট লম্বা। বেশ খাড়াও, আর নিম্নমুখী ঢালের মাত্রা ১৮.৫ শতাংশ। এছাড়াও এই বিমানবন্দরে কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় ঘন কুয়াশা, বৃষ্টি ও তুষারপাতের সময় অবতরণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রিন্সেস জুলিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের এই বিমানবন্দরটির অবস্থান সাগর সৈকতের সঙ্গেই। কোনো উড়োজাহাজ যখন বিমানবন্দরে নামতে থাকে সৈকতে থাকা পর্যটকেরা রীতিমতো বাতাসের তীব্র ঝাপটা অনুভব করেন।
রানওয়ের দৈর্ঘ্য সাত হাজার ফুটের একটু বেশি। যার একপাশে মাহো সৈকত, আরেক পাশে পর্বত। ১৯৪২ সালে মূলত সামরিক এয়ারস্ট্রিপ হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও, এখন সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করে।
কাই টাক বিমানবন্দর, হংকং
১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কাই টাক হংকংয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। পরে এটি বন্ধ হয়ে যায়। একসময় এটি হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিস্থাপিত হয়। দুপাশ থেকে ক্রমাগত বাতাস প্রবাহিত হওয়ায়, এটি একটি বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল।
এছাড়াও বিমানবন্দরটির দুই পাশে বড় বড় ভবন থাকায় অবতরণ এবং উড্ডয়নের সময় বেশ সতর্ক থাকতে হতো। দক্ষ পাইলটের জন্যও এই বিমানবন্দরে অবতরণ করা বেশ কঠিন। যার ফলে যাত্রীরা এর নাম দিয়েছে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বিমানবন্দর।
মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মালদ্বীপ
মালদ্বীপের হুলহুলে দ্বীপে বিমানবন্দরটি অবস্থিত। এটির রানওয়ে এত বেশি ছোট যে, এটি পুরো দ্বীপের সমান।
যদি বিমান নামার সময় হিসাবে কোনো ভুল হয়, তাহলেই এটি সমুদ্রে গিয়ে পড়বে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিমানবন্দর, পর্তুগাল
কেউ কেউ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বিমানবন্দরকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্ময় হিসেবে বর্ণনা করেন। এই বিমানবন্দরটি এতই ছোট যে এর রানওয়ে সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রসারিত করতে হয়েছিল।
আর এই রানওয়ে তৈরির জন্য ১৮০টি স্প্যান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সরু এয়াস্ট্রিপ ও প্রবল বাতাস এই বিমানবন্দরটিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
জিব্রাল্টার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের জিব্রাল্টার বিমানবন্দরে অবতরণের সময় একটি মনোলিথ কিংবা একশিলা স্তম্ভকে সামনে পাওয়া যাবে। রানওয়েটি পাথরের খাঁড়া দেয়াল ও শহরের মাঝখানে অবস্থিত।
তবে এই বিমানবন্দরের সবচেয়ে বড় চমকটি হলো- এর রানওয়েটি চলে গেছে একটি ব্যস্ত সড়কের মাঝখান দিয়ে। কাজেই প্রতিবার কোনো উড়োজাহাজ ওঠা বা নামার সময় রাস্তাটি বন্ধ করে দিতে হয়।
পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুটান
পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এতটাই বিপজ্জনক যে এখানে ২৪ জনেরও কম পাইলট রয়েছেন; যারা প্রশিক্ষিত এবং এটি ব্যবহার করার জন্য অনুমোদিত। এই বিমানবন্দরটি শুধুমাত্র সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করে এবং এর প্রধান ঝুঁকি হলো এটি হিমালয় পর্বত দিয়ে বেষ্টিত।
এছাড়াও ওই অঞ্চলের আবহাওয়ার কারণে অবতরণের কিছুক্ষণ আগেই কেবল রানওয়ে দৃশ্যমান হয়।
তেনজিং হিলারি বিমানবন্দর, নেপাল
ছোট এই বিমানবন্দরটি অনেক বেশি জনপ্রিয়। কারণ যেখানে অধিকাংশ মানুষ এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে আরোহণ শুরু করে, সেখানেই এটি অবস্থিত। কিন্তু প্রায়শই কুয়াশা, বাতাস এবং দুর্বল দৃশ্যমানতার কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয় বা এমনকি অনেক সময় এটি বন্ধও হয়ে যায়।
বিমানবন্দরটির অন্যান্য ঝুঁকিগুলো হলো- এটি পাহাড় বেষ্টিত এবং এটি অনেক ওপরে অবস্থিত হওয়ায় কখনো কখনো অক্সিজেন পেতে অসুবিধা হয়।
আইসল্যান্ডের আইস রানওয়ে
আসলে এখানে কোনো সত্যিকারের রানওয়েই নেই। বিমান যেখানে অবতরণ করে সেটি শুধু পরিষ্কার করা বরফ এবং তুষারে আচ্ছাদিত স্থান। এখানকার রানওয়েতে অবতরণের সময় যে বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হয় তা হলো বিমানটির ওজন।
এজন্য অবতরণের আগেই প্রত্যেকটি বিমানের যথাযথ ওজন মাপা হয়। কারণ ওজন একটু বেশি হলেই তা বরফের রানওয়ে ভেঙে ফেলতে পারে। আর অতিরিক্ত ওজনের কারণে যে সমস্যা হবে তা হলো বিমানটি বরফের রানওয়েতে থাকা তুষারে আটকেও যেতে পারে।
টেলুরাইড ট্র্যাক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
টেলুরাইড ট্র্যাক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ৭৮ ফুট ওপরে অবস্থিত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিমানবন্দর। টেলুরাইড পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় পাইলটদের সময় বিবেচনা করে অবতরণ করতে হয়।
তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, রানওয়ের গোড়ায় একটি ঢাল আছে যার ফলে পাইলটের হিসাবে কোনো ভুল হলে বিমান যেকোনো মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে।
লা গার্দিয়া বিমানবন্দর, নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কের প্রধান অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর এটি। অন্যান্য রাজ্যের মানুষজন এই বিমানবন্দর দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। যার ফলে এখানে অনেক বেশি ভিড় হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে খুবই সাবধানতা ও পরিকল্পনার সঙ্গে এখানে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে হয়।
তবে সাবধানতা অবলম্বন সত্ত্বেও প্রায়ই বিমানগুলো একে অন্যের রানওয়েতে ঢুকে পড়ে। এই বিমানবন্দরটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জয়পুর বিমানবন্দর, ভারত
ভারতের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। বিমানবন্দরটির রানওয়েগুলো পাহাড়ের ওপরের উঁচু ভূমিতে অবস্থিত। এছাড়াও রানওয়েগুলো বিপজ্জনক জলপ্রপাতের কাছাকাছি অবস্থিত। জয়পুরে ট্র্যাকের এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
২০২০ সালের আগস্টে, ভারি বৃষ্টির কারণে এই বিমানবন্দরে অবতরণকারী একটি বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। এটি রানওয়ে থেকে ছিটকে ঢালে পড়ে যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post