বিশ্বজুড়ে অনিরাপদ অভিবাসন বাস্তবতার মাঝেই পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। বাংলাদেশেও প্রতি বছর যত অভিবাসী দেশ ছাড়েন, সবার কপালে জোটে না নিরাপত্তা, মর্যাদা। কাজের ভিসায় ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে হরহামেশাই ঘটে প্রতারণা। রাজধানীতে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে এমন একটি প্রতারক প্রতিষ্ঠানের খবর জানা গেছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের সোহান প্রায় ১ দশক ধরে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। ঘাম আর শ্রমে তিলে তিলে সেখানে গড়ে তুলেন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভালোই কাটছিলো দিন। তবে আরও উন্নত জীবনের খোঁজে উদ্যোগ নেন ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর।
এক আত্মীয়র মাধ্যমে বাংলাদেশে সানি ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন। একসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসেন দেশে। ক্রোয়েশিয়ায় হোটেল ম্যানেজমেন্টে কাজের সুযোগ দেয়ার কথা বলে ১২ লাখ টাকায় সোহানের সঙ্গে চুক্তি হয় সানি ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার সানি আহম্মেদের সঙ্গে। এরপরের গল্প কেবলই প্রতারণার। দেয়া হয় ভুয়া ভিসা আর টিকিট। বিমানবন্দরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল।
ভুক্তভোগী সোহান বলেন, ট্রাভেলসের মাধ্যমে আমরা অনলাইনে টিকিট চেক দেই। তো বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি এটা পুরোটাই ফলট। এই নামে কোনো সিট বুকিংই নাই। একইভাবে প্রতারণার শিকায় হন সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহানের ছোট ভাই জুয়েল ও ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেনও। ৩ জনের কাছ থেকে ২৮ লাখ টাকা হাতিয়ে সানি পাড়ি জমায় পর্তুগালে। ধাপে ধাপে এসব টাকা দেন দেশে থাকা সোহানের বড় ভাই খোকন তালুকদার।
খোকন বলেন, এই টাকা জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ঋণ করে, সুদের ওপর লোন নিয়ে আমি টাকা দিয়েছি। ঘটনা বুঝতে রাজধানীর উত্তরার সানি ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সিতে যায়। সেখানে তালা ঝুলছে। বিদেশ যেতে চাই এমন কথা বলে- যোগাযোগ করা হয় সানির বাবা এনামুল হকের সঙ্গে। রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে কীভাবে লোক পাঠাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে দাবি করেন কিছুই জানেন না তিনি।
সানির বাবা এনামুল হক বলেন, আমার ছেলে বাইরে থেকে এসে ৬-৭ মাস থেকে এখানে অফিস খুলে গেছে। মাঝে মধ্যে আসে। বাকি কাজ ওখান থেকেই করে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র ছাড়া কীভাবে হচ্ছে এমন কর্মকাণ্ড? এ বিষয়ে কথা বলে রাজি হননি বিএমইটির কেউই। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে কাজের খোঁজে ক্রোয়েশিয়ায় গেছেন ২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি। এদের মধ্যে অনেকেই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post