মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর পর এক বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, অনেক বাংলাদেশী কর্মী কাজ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। অভিযোগে বলছেন, তারা অনেকেই চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও বেতনসহ অন্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। এজন্য তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করে বলছেন, শ্রমিকদের পছন্দমত কাজ ও অন্য সুবিধা না পেলে তারা সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ করে। এজন্য তাদের এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তবে দূতাবাসের লেবার উইং কর্মকর্তারা বলছেন, কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া কাজ না পাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সমস্যা সমাধানে তারা আন্তরিক রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ও নিয়োগকর্তাদের সাথে আলোচনা করে কিছু কিছু কোম্পানির শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। দূতাবাস কর্তৃক ব্যাবস্থা নেয়ার পর অনেকেই চাকরি ও বেতনাদি নিয়মিত পাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত আরো যে একাধিক সমস্যাগুলো রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবার সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে।
অনেকেই কাজ ও বেতন না পাওয়ার ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্নভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরে ভিডিও ছবি পোস্ট করে সহযোগিতা চাচ্ছেন। কুয়ালালামপুরসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকায় গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যাচ্ছে শ্রমিকদের কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা মিলছে। দেখা গেছে তাদের যে বাসস্থানে রাখা হচ্ছে সেখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত শ্রমিক গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়।
কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, তাদের পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় দিচ্ছেন না নিয়োগকর্তারা। মালয়েশিয়ার কেমন্ত্রীয়ান কেসিহাটান বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মানবসম্পদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। ফলে তারা অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিক নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, অভিযুক্ত এসব নিয়োগকর্তাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশী যারা মালয়েশিয়ায় বৈবাহিক সূত্রে অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের লাইসেন্স পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব নিয়োগকর্তারা বলেন, কলিং ভিসায় যেসব বাংলাদেশী কর্মী এসেছেন তারা মনে করেন, এখানে এসেই বেতন ভাতাদিসহ কাজ পেয়ে যাবেন। কাজে যোগদান প্রক্রিয়াটি একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। নতুন আগতদের সবাই অদক্ষ শ্রমিক। এখানে শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পর্যায়ক্রমে সবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু তারা অপেক্ষা করতে চান না। তাছাড়া তাদের পছন্দসই কাজ না পেলে কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। তারা যেসব অভিযোগ করেন সব সত্য নয়।
এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসে নিযুক্ত কাউন্সিলর (শ্রম) সৈয়দ শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হওয়ায় সরাসরি দেখা করার পর তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে অত্যান্ত আন্তরিক, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অসংখ্য কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিয়েছি। ব্যাবস্থা নেয়ার পর কর্মীরা ভালো আছে। এখন নতুন যে অভিযোগ এলো পর্যায়ক্রমে সব সমস্যা সমাধান করা হবে। কোনো নিয়োগকর্তা কর্মীদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে মালয়েশিয়া জেটিকের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স ও এজেন্ট বাতিল করা হতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post