ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে এসব হামলায় অন্তত ৪০ জন মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। গাজায় আগ্রাসনে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন, তার প্রতিবাদেই হামলা করা হচ্ছে।
গত ২৬ অক্টোবর মার্কিন বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করে ইরবিল বিমান ঘাঁটির এক সেনা ব্যারাকের দ্বিতীয় তলায় বিধ্বস্ত হয় একটি ড্রোন। এবিষয়ে অবহিত দুজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, বিস্ফোরক-বোঝাই ড্রোনটি যান্ত্রিক কোনো ত্রুটির কারণে লক্ষ্যে আঘাত হানার পরেও বিস্ফোরিত হয়নি। আর তাতেই প্রাণরক্ষা হয় অনেক সেনার। আর যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার থেকে রক্ষা পায়।
ড্রোনটি ভোর পাঁচটায় আঘাত হেনেছিল, ফলে সেটি বিস্ফোরিত হলে নৃশংস এক হত্যাযজ্ঞ হতো বলে নাম না প্রকাশের শর্তে জানান উভয় কর্মকর্তা। পেন্টাগনের তথ্যানুসারে, গত তিন সপ্তাহে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য ড্রোন ও রকেট হামলার অন্তত ৪০টি ঘটনা ঘটেছে। এগুলো করছে এ দুটি দেশের ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা। গাজায় আগ্রাসনে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন, তার প্রতিবাদেই হামলা করা হচ্ছে।
এপর্যন্ত তাতে মাত্র জনাকয়েক মার্কিন সেনা সামান্য আহত হয়েছে, নিক্ষেপিত বেশিরভাগ রকেট ও আত্মঘাতী ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ দুই দেশে মোট ৩ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
চিন্তক সংস্থা– ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির একজন গবেষক ও সাবেক মার্কিন সহকারী-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড শেনকার বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, কিংবা ইরান ও তার মিত্ররা কেউই একে-অন্যের সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না বলেই মনে হচ্ছে। যদিও তেমনটাই ঘটার ঝুঁকি বাড়ছে। (মার্কিন সেনাদের ওপর) মারাত্মক কোন হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে ‘এটা খুবই বাস্তবসঙ্গত একটা উদ্বেগ’- মন্তব্য করেন তিনি।
ইরাকি ও সিরিয় মিলিশিয়াদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার মতে, মার্কিন সেনাদের ব্যাপক সংখ্যায় হত্যার চেয়ে হয়রানির মধ্যে রাখাটাই মূল উদ্দেশ্য, সেভাবেই তারা ছক কষে পরিমিতভাবে হামলা করছে। কিন্তু, এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু করার ক্ষমতা তাদের আছে।’
বড় ধরনের কোনো হামলায় একসাথে অনেক মার্কিন সৈন্য নিহত হলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কীভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন– সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। ঘরোয়া রাজনীতি নিয়ে তাঁর জন্য চিন্তার কারণ এমনিতেই যথেষ্ট। আগামী বছরে নির্বাচনের আগে, বর্তমানে জনমত জরিপে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে এপর্যন্ত ইসরায়েলকে সহায়তা দানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন বাইডেন।
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখন্ড গাজা শাসন করা হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালানোর পরে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। উপকূলীয় এ ভূখণ্ডে বিরতিহীনভাবে বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েল। যাতে এপর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের একটা বড় অংশই শিশু।
ইরান ৭ অক্টোবরের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জানায়, এর পেছনে তাদের কোন ভূমিকা ছিল না। যদিও, তেহরান দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সফল এ আক্রমণের জন্য হামাসকে অভিনন্দন জানায়।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোতভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিলে, ইরাক ও সিরিয়ার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে স্থানীয় মিলিশিয়ারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, গত রোববার ইরাকে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানির সাথে বৈঠক করেন, এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়া এড়াতে- ইরাকে সক্রিয় মিলিশিয়াদের দমন করার অনুরোধ করেন।
কিন্তু, এসব শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর হামলা বন্ধে তেমনভাবে কোন চাপ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন সুদানি। এসব মিলিশিয়া বাহিনীর সমর্থক ও অর্থায়নকারী ইরানকেও রাজি করাতে পারেননি। এমনটাই জানান তাঁর জোট সরকারের পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা, একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং মিলিশিয়া বাহিনীর একজন কমান্ডার।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ইরাকি মিলিশিয়া দলগুলোর অধিনায়কদের সাথে এক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী সুদানি ও তাঁর সরকারের ১০ জ্যেষ্ঠ সদস্য। উদ্দেশ্য ছিল, মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বন্ধে তাদের রাজি করানো। উপরে উল্লেখিত, সাত ব্যক্তির মধ্যে কেউ কেউ এ বৈঠকে অংশ নেন, বাকিদের বৈঠক সম্পর্কে পরে বিস্তারিত জানানো হয়।
সূত্রগুলো জানায়, সেদিন সুদানির অনুরোধ কেউ কানে তোলেনি। বরং, কমান্ডাররা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সুরে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও সেখানে বোমাবর্ষণ– বন্ধ না করা পর্যন্ত, তাঁরা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালিয়ে যাবেন।
ইরাকের বর্তমান জোট সরকারের শিয়া আইনপ্রণেতা ও ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী আসাইব আহল আল-হক মিলিশিয়া বাহিনীর একজন কমান্ডার আলী তুর্কি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হোক, বা অন্য যে কেউ – আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের বিরুদ্ধে কেউই দাঁড়াতে পারবে না।’
আরেক শিয়া আইনপ্রণেতা আরিফ আল-হামামি বলেন, কূটনীতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। ‘যতদিন আমেরিকার সহায়তায় ইসরায়েল গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালাবে, ততোদিন এ ধরনের হামলা বন্ধের শক্তি প্রধানমন্ত্রীরও থাকবে না।’
মিলিশিয়া বাহিনীর হামলা, এবং তাঁর প্রেক্ষিতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে রয়টার্স ইরাক ও ইরান সরকারের মন্তব্য জানতে চায়, কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে তারা কোনো বিবৃতি জানায়নি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
Discussion about this post