বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে গত ২৯ আগস্ট নেপালের কাঠমান্ডু যান একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় টিকেট কাটার সময় গত ২২ আগস্ট বিমানবন্দরে হুইলচেয়ার বুকিং করেছিলেন তিনি।
আশরাফুনের অভিযোগ, নির্ধারিত দিন কাঠমান্ডু পৌঁছানোর পর তাঁর কাছ থেকে হুইল চেয়ার ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত ২২০ ডলার দাবি করে বিমান কর্তৃপক্ষ। কাউন্টার থেকে তাঁকে জানানো হয়, টাকা পরিশোধ না করলে তাঁর ফিরতি টিকিট বাতিল করা হবে। উপায় না দেখে তিনি ২২০ ডলার পরিশোধ করেন। কাঠমান্ডু থেকে তিনি ঢাকায় ফেরেন ২ সেপ্টেম্বর।
আশরাফুনের অভিযোগ, টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে ফ্লাইটে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে বিমানের কর্মীরা। ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোন এলাকা থেকে টার্মিনালে আসার জন্য তাঁকে কোনো যানবাহনও দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের এক কর্মীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
আশরাফুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্লাইট থেকে নামার পর আমি যখন জানতে চাইলাম, আমার জন্য যানবাহন কেন নেই। জবাবে বিমানকর্মীরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে একজন হ্যান্ডলার হুইল চেয়ার নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে হুইল চেয়ারে করেই অ্যাপ্রন এলাকা থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত নিয়ে আসেন। তাঁর ডিউটির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে আমার প্রতি বারবার বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। পরে টার্মিনালে এসে যখন আমি বললাম, আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নিয়ে যান। তখন তিনি নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অন্য একজন যাত্রীর সহায়তায় আমি কোর্ট পর্যন্ত যাই। সেখানে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করি।’
অভিযোগ দায়েরের পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ১৭ অক্টোবর দুই দফায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হুইল চেয়ার হ্যান্ডলার ইউসুফ করিমকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আশরাফুন নাহারের দাবি, প্রথম শুনানির পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিমান কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। সেই সময় রায়ের কপি জোগাড় করতে পারেননি তিনি। কিন্তু পরে দ্বিতীয় শুনানির পর তিনি জানতে পারেন জরিমানা করা হয়েছে হুইল চেয়ার হ্যান্ডলারকে।
ভুক্তভোগী আশরাফুন বলেন, ‘মামলা দায়ের পর আমার অফিসে বিমানের দুইজন কর্মকর্তা এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে বারবার অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। আমাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য ২৫ হাজার টাকাও দিতে চান তারা। এরপরই দ্বিতীয় শুনানিতে বিমান কর্তৃপক্ষের পরিবর্তে হুইল চেয়ার হ্যান্ডলারকে জরিমানা করার বিষয়টি জানতে পারি। আমাকে জানানো হয়, বিমান কর্তৃপক্ষের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায় পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু বিমান যে আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিল তার কোনো প্রতিকার পেলাম না।’
এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক সুফিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আশরাফুন নাহারের অভিযোগের বিষয়ে আমরা শুনানি গ্রহণ করেছি। শুনানিতে বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে হুইল চেয়ার হ্যান্ডলারের গাফিলতির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। তাঁর ডিউটির সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি অভিযোগকারীকে অসহযোগিতা করেন। এ কারণে তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
বিমানের পুনর্বিবেচনার আবেদনের যে বিষয়টি আশরাফুন উল্লেখ করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোনো রায় দেওয়া হলে সেটি পুনর্বিবেচনার সুযোগ সেই আদালতের আর থাকে না। আসলে আমরা হুইল চেয়ার হ্যান্ডলারের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি। সেই অনুযায়ীই তাঁকে জরিমানা করা হয়েছে। রায়ের বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন।’
বিমানবন্দরে হুইল চেয়ার ব্যবহারের নিয়ম কী?
বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই অসুস্থ, প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক বা যাদের জন্য হাঁটা বা দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর তারা হুইল চেয়ার ব্যবহারের সুযোগ পান। এক্ষেত্রে টিকেট কাটার সময় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে বিষয়টি অবহিত করতে হয়। বেশিরভাগ বিমানবন্দরেই হুইল চেয়ার ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিয়ম হলো- টিকিট ইস্যুর সময় যাত্রীকে বলতে হবে যে তার হুইল চেয়ার প্রয়োজন। এটা তার টিকিট বুকিংয়ে লেখা থাকবে। যদি এটা লেখা থাকে তাহলে সেই যাত্রীকে হুইল চেয়ার দিতে এয়ারলাইনস বাধ্য এবং পরবর্তীতে এটার জন্য কোনো চার্জ ডিমান্ড করা যাবেনা।’
বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক এ সদস্য বলেন, ‘আর যদি যাত্রী বুকিংয়ের সময় এটা জানাতে ভুলে যান তাহলে চেক ইন কাউন্টারে গিয়ে বলতে হবে এবং দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে হুইল চেয়ার নেওয়া যাবে। অনেক সময় অনেক যাত্রীর মধ্যে হাঁটার অনীহা থাকায় তারা হুইল চেয়ার নিতে চান সেক্ষেত্রে আসলেই যার প্রয়োজন সে হয়তো এই সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। এ কারণে অল্প কিছু বিমানবন্দরে এটা ব্যবহারের জন্য চার্জ করা হয়। কিন্তু যদি টিকেটেই লেখা থাকে তাহলে আর এটা করার সুযোগ নেই। যদি কোনো এয়ারলাইনস এটা করে সেটা আইনসিদ্ধ হয়না।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post