প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের প্রধান উৎস আমেরিকা। কিন্তু, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমেরিকা থেকে আয় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ফলে, প্রবাসী আয়ের মোট পরিমাণও কমেছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে দেড় বছর ধরে ডলার-সংকট চলছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা কমে যাওয়ায় সেই চাপ আরও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৯১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আমেরিকা থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বড় অংশই শিক্ষিত। তাঁদের আয় না কমলেও দেশে আয় পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বৈধ পথের চেয়ে হুন্ডিতে দাম অনেক বেশি। এ জন্য এখন অনেকেই সেই পথ বেছে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে প্রবাসী আয়ের শীর্ষ ১০ উৎস হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, ওমান, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও বাহরাইন। এই ১০টি দেশ থেকে ৮৬ শতাংশ প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ইউএই, যুক্তরাজ্য, ওমান থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। বাকি সাতটি দেশ থেকে কমেছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, দেশে কয়েক মাস ধরেই উচ্চমূল্যস্ফীতি চলছে। এ জন্য প্রবাসীরা দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ পাঠাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেখানে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
সেলিম রায়হান মনে করেন, প্রবাসী আয় আসছে ঠিকই, তবে ব্যাংকিং মাধ্যমে কম আসছে। আসলে হুন্ডির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। সাধারণত অর্থ পাচার বেড়ে গেলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এদিকে ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কারণে রিজার্ভের ওপরও চাপ বেড়েছে। তাই হুন্ডির দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে অর্থ পাচার রোধ করতেই হবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমেরিকা থেকে ৫১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে এসেছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এর মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। এতে প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মোট জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ৫৪ শতাংশই হয়েছে সৌদি আরবে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ ওমানে। তৃতীয় স্থানে থাকা ইউএইতে রপ্তানি হয় ৯ শতাংশ জনশক্তি।
গত অর্থবছরের হিসাবে প্রবাসী আয়ে শীর্ষ দুই দেশ ছিল সৌদি আরব ও আমেরিকা। এবার সেখানে প্রবাসী আয়ে শীর্ষে ইউএই। গত তিন মাসে দেশটি থেকে ৮৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রবাসী আয়ের উৎস দেশের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব (৮১ দশমিক ৭২ কোটি ডলার) ও যুক্তরাজ্য (৫৮ দশমিক ৮৮ কোটি ডলার)।
মধপ্রাচ্যের মতো আমেরিকায় জনশক্তি রপ্তানি না হলেও সেখানে স্থায়ীভাবে কয়েক লাখ বাংলাদেশি থাকেন। প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশটিতে যান। মূলত তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়ে থাকেন।
২০১৯-২০ অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। পরের বছর সেটি ৩৪৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তখন থেকেই প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যা গত দুই বছরও বজায় ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বড় অংশই শিক্ষিত। তাঁদের আয় না কমলেও দেশে আয় পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে দেশটি থেকে এসেছিল ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এর মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। এতে প্রবাসী আয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের বড় অংশই শিক্ষিত। তাঁদের আয় না কমলেও দেশে আয় পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বৈধ পথের চেয়ে হুন্ডিতে দাম অনেক বেশি। এ জন্য এখন অনেকেই সেই পথ বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া আয় পাঠানোর আগে অনেকেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকেও বিবেচনায় নিচ্ছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post