বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে ডলার সংকট চলছে। অনেকেই ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে ডলার না পেয়ে দ্বারস্থ হচ্ছেন খোলা বাজারে। ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জে ডলার না থাকলেও কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলার আসছে কোত্থেকে – অনেকের মনেই সে প্রশ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী দেশে নগদ ডলারের দাম হওয়ার কথা ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু এ দামে ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ডলার। এমন কী ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা খরচ করেও মিলছে না ডলার। এ অবস্থায় ডলারের জন্য মানুষকে ভিড়তে হচ্ছে কার্ব মার্কেটে। বর্তমানে কার্ব মার্কেট অর্থাৎ খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। অনেকে আবার ১২০ টাকা দিয়েও কিনতে পারছেন না ডলার। এ অবস্থায় হাতে হাতে ডলার কিনতে ১২১-১২২ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগে মানুষ বিদেশ থেকে ফিরে ব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে আসতেন। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে এ বিক্রির হার অনেক কমে গেছে। যাদের হাতে ডলার আছে তারা ধরে রাখছেন। এদিকে, রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ কমে যাওয়ায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। গুলশানের কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধিকারীরা বলেন, দাম ঠিক করে দেয়ার পরও ব্যাংক থেকে ১১৫ টাকার কমে ডলার কেনা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে এর থেকে বেশি দাম দিয়ে হলেও ডলার কিনতে হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনলেও বিক্রির সময় রয়েছে নানা রকমের বিধিনিষেধ। ফলে কার্যত ডলার বিক্রি বন্ধ রেখে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।
এত কিছুর মধ্যে খোলা বাজারে কীভাবে ডলার আসছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কার্ব মার্কেট ব্যবসায়ী জানান, এখানে বর্তমানে ডলারের বড় উৎস হচ্ছে বিদেশফেরতদের আনা নগদ ডলার। ব্যাংকে ডলার বিক্রি করলে লাভ কম উল্লেখ করে তারা বলেন, খোলাবাজারে বিক্রি করলে ব্যাংকের চেয়ে তারা ৭-৮ টাকা বেশি পান। এ কারণে খোলা বাজার তাদের পছন্দ।
তবে আগের মতো পরিস্থিতি নেই জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ১৫ দিনে খোলা বাজারে ডলার বিক্রির পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অনেকে আবার বিদেশ যাবেন, তাই সঙ্গে আনা ডলার হাতে রাখছেন। অনেকে ভাবছেন, ডলারের দাম সামনে আরও বাড়বে, তাই বিক্রি না করে তারা ধরে রাখছেন। এছাড়া আগে খোলা বাজার ব্যবসায়ীরা সরাসরি ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার কিনে রাখতেন। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলোতেই ডলার সংকট; মানি এক্সচেঞ্জ এক রকম বন্ধ! এ অবস্থায় লোকাল মাধ্যম ছাড়া ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, আর যা পাওয়া যাচ্ছে তাও অপ্রতুল।
এদিকে, গত মাস থেকে ব্যাংক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খোলা বাজারে ডলারের প্রবাহ কমাতে নানা ধরনের অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যারা মূলত হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের সিংহভাগের খোলা বাজারের সঙ্গে যোগসাজশ আছে। শুধু খোলা বাজার না, মানি এক্সচেঞ্জগুলোও ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার না পেয়ে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
গত ৩০ আগস্ট দেশের কার্ব মার্কেট এবং মানি এক্সচেঞ্জে ব্যাংক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার জব্দ করা হয়। একইদিন অবৈধ ও চড়া দামে ডলার কেনাবেচার অভিযোগে ১০টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব অভিযান চালানো হচ্ছে এবং নজরদারি করা হচ্ছে, তা দিয়ে দেশের ডলার সংকট কমানো যাবে না। মানুষ তখনই ব্যাংক ছেড়ে খোলাবাজারে যাচ্ছেন, যখন সে বেশি দামে কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি করতে পারছেন। আবার কেনার সময় সহজেই কিনতে পারছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার নিয়ে যত কঠোর অবস্থানে থাকবে, দেশে ডলার সংকট তত ভয়াবহ হবে।
ডলারের মান বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ
এ ব্যাপারে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি আনিস এ খান সময় সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত, ডলারের মান ধরে না রেখে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মান যত ধরে রাখবে, অবৈধ চ্যানেলে ডলার লেনদেন তত বাড়বে। এদিকে, ডলারের মান বেঁধে দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না উল্লেখ করে আনিস বলেন, দিনকে দিন ডলারের দাম বাড়ছেই। এমন না ডলারের মান বেঁধে দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানো যাচ্ছে। উল্টা প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে ডলার পাঠাতে আগ্রহ পাচ্ছেন না। যাদের হাতে ডলার আছে, তারাও বিক্রি না করে ধরে রাখছেন বা অবৈধ চ্যানেলে বিক্রি করছেন। ডলারের মান ছেড়ে দিলে হয়তো ডলারের দাম এক লাফে অনেক বেড়ে যাবে। এরপর আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post