মহাজগতের নানা রকমের তথ্য সংগ্রহ করে মানুষ। আর মহাশূণ্যে ভ্রমণ করার জন্য নভোচারীদের পরতে হয় একটি বিশেষ ধরনের পোশাক যাকে বলা হয় স্পেস স্যুট। মহাশূণ্যে সব সময় কেন স্পেস স্যুট পরেই ঘুরতে হয়, আর কি করেই বা এই পোশাকটি তৈরি হয়? ১৯৬১ সালে ইউরি অলেক্সিয়েভিচ গ্যাগারিনের মাধ্যমে মহাবিশ্বে প্রথম মানুষের পদচারণা ঘটে। মহাকাশে যেতে নভোচারীদের বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরতে হয়। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে মহাকাশচারিদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তাদের শরীরের বিশেষ পোশাকটি, যা স্পেসস্যুট নামে পরিচিত।
ব্যাবহারিক ভাষায় বিশেষ এই পোশাকটিতে স্পেস স্যুট নামে ডাকা হলেও এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ কোন পোশাক বা একগুচ্ছ পোশাকের মিশেল নয়। বরং এটি হচ্ছে স্বয়ং একটি মহাকাশযান, যা কেবল একজনের জন্য প্রযোজ্য। এটি তৈরিও হয় বিশেষ কারিগরী ও প্রযুক্তি দক্ষতায়।
এই পোশাক দিয়ে নভোচারি শূণ্যে ভেসে ভেসে স্পেস স্টেশনের বাইরে ত্রুটি বিচ্যুতি মেরামতের কাজও করতে পারেন। স্পেস স্যুটের দাপ্তরিক নাম- এক্সট্রা ভেইকুলার মোবিলিটি ইউনিট বা ইএমইউ। বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে সাজানো স্পেসস্যুটটি একজন মহাকাশচারীকে মহাশূণ্যের বাইরে মহাকাশে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। এই পোশাক দিয়ে নভোচারি শূণ্যে ভেসে ভেসে স্পেস স্টেশনের বাইরে ত্রুটি বিচ্যুতি মেরামতের কাজও করতে পারেন। চাঁদে অবতরণের ক্ষেত্রেও এই স্পেস স্যুট দরকার পড়ে।
মহাকাশে পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমন্ডল নেই। তাই সেখানে কোনো অক্সিজেনের সরবরাহও নেই এমন প্রতিকূল পরিবেশে অক্সিজেনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, নভোচারির শরীরে বাহ্যিক চাপ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, নভোচারিদের মধ্যে পারস্পরিক এবং পৃথিবীতে থাকা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা, মহাকাশের ভয়াবহ রেডিয়েশন প্রতিহত করাসহ নানাবিধ কাজে সাহায্য করে তাদের শরীরের স্পেসস্যুটটি।
এতো সব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নির্মিত স্পেস স্যুটটির মূল্যও তাই আকাশচুম্বি। গড়ে একটি স্পেস স্যুটের দাম প্রায় ১২ মিলিয়র ডলার বা ১২০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই স্যুটগুলো নির্মাণ করাও বেশ কষ্টসাধ্য ও জটিল। বিশেষ প্রযুক্তি ও মেটেরিয়েল তৈরি তৈরি হয় এই পোশাক।
এতে কাপড়ের দশটি স্তর থাকে যা প্রতিকূল আবহাওয়া রোধে সাহায্য করে। নভোচারিদের এই স্পেস স্যুট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নাইলন, নিওপ্রিন, রাবার, অ্যালুমিনাইজড মাইলার, ড্যাক্রোন, ক্যাপ্টন, টেফলন এবং বিভিন্ন ধরণের গুণাবলীর মেটেরিয়েলসহ অন্যন্য বিভিন্ন পদার্থের কাপড়ের স্তর।
প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পেস স্যুটের ডিজাইনেও অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত চলমান নাসার মারকিউরি প্রোগ্রামে সর্বপ্রথম মহাকাশচারীদের জন্য স্পেস স্যুট তৈরি করা হয়। এ সময়ই প্রথম মহাকাশচারীরা মহাকাশে ভ্রমণ করেন। যেহেতু সেসময় তারা কখনোই তাদের বাহন ত্যাগ করেননি তাই তারা যাত্রার শুরুতেই যেই স্পেস স্যুট পরে ছিলেন সেটি পরেই তাদের সব ধরনের কাজ শেষ করতে হয়েছে। তবে এখন সময় বদলেছে।
প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পেস স্যুটের ডিজাইনেও অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া নতুন সব ধরনের মেটেরিয়াল এবং পদ্ধতি অবলম্বন করে আরামদায়ক ও দক্ষ স্পেস স্যুট তৈরি করা হচ্ছে। একটি স্পেস স্যুটকে অবশ্যই চরম তাপমাত্রায় মহাকাশচারীকে রক্ষা করতে হয়। মহাশূণ্যে মহাকাশচারী মাইনাস ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মতো ঠান্ডার পাশাপাশি ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও গরম অনুভব করতে পারে।
পুরুষ বা নারী স্পেস স্যুটের মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য নেই। লাইফ সাপোর্ট ব্যাকপ্যাকসহ এ সব স্যুটের ওজন প্রায় ৩১০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। মহাকাশচারীরা তাদের স্পেস স্যুটের সাথে পলি কার্বনের তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক পরে থাকেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post