পত্রিকার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফাঁদ পাততেন শামীমা রহমান খান সোনিয়া (৩০)। বিজ্ঞাপন দিতেন ‘কানাডার নাগরিক। সুন্দরী বিধবা পরহেজগার পাত্রীর জন্য বয়স্ক পাত্র চাই’ । এরপর বিজ্ঞাপনে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকত সেখানে অনেকেই যোগাযোগ করতেন। সোনিয়ার হয়ে ওই কল রিসিভ করতেন তার পিএস পরিচয়ধারী মো. তুষার। পাত্র পক্ষকে তুষার বলতেন- ‘ম্যাডার সরাসরি কারও ফোন রিসিভ করেন না। আপনার জীবন বৃত্তান্ত ই-মেইলে পাঠান। ম্যাডামের পছন্দ হলে যোগাযোগ করা হবে।’ সমাজের উঁচু স্তরের লোক বোঝাতে এমন কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সোনিয়া ও তার চক্র। সর্বশেষ তার চক্করে পড়েছিলেন উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের আব্দুল আজিজ খান নামে এক ব্যবসায়ী। বিয়ে করে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ১৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন সোনিয়া। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ার কথা বোঝার পর সোনিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন ওই ব্যবসায়ীা। এরপর রোববার উত্তরা এলাকা থেকে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, ‘সোনিয়ার কানাডার কোনো নাগরিকত্ব নেই। জালিয়াতি করে কিছু কাগজপত্র তিনি তৈরি করেছেন। বয়স্ক বিত্তশালী পাত্র পেলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ফোর স্টার বা ফাইভ স্টার হোটেলে বসে বিয়ের কথাবার্তা চালাতেন। এরপর ভিসা, কাবিন ও বিয়ের কেনাকাটার কথা বলে নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। যখন বুঝতেন আর টাকা আদায় করা সম্ভব নয় তখন সব মোবাইল বন্ধ রেখে কয়েক দিনের জন্য গা-ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরে আবার নতুন সিম কার্ড নিয়ে নতুনভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে অন্য কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করতেন।’
প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ খান মামলার এজাহারে বলেন, ২০০৫ সালে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একাকি জীবন-যাপন করছিলেন তিনি। ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখে সোনিয়ার নম্বরে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে অন্যরা ফোন রিসিভ করে জীবন-বৃত্তান্ত পাঠানোর জন্য ই-মেইল নম্বর দেয়। জীবন-বৃত্তান্ত পাঠানোর কয়েকদিন পর থেকে পাত্রীর সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা হতো। কিছুদিন পর তারা হোটেল ওয়েস্টিনে সাক্ষাৎ করেন। তখন পাত্রী জানান- কানাডার অটোয়ায় বসবাস করেন। বিয়ের জন্য ঢাকায় এসেছেন। বারিধারা ডিওএইচএসে এক চাচার বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানান। উভয়ের মধ্যে কথাবার্তার পর বিয়ের তারিখও ঠিকঠাক হয়েছিল। প্রথম স্ত্রীর ব্যবহৃত চেইন ও কানের দুলও সোনিয়াকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নতুন আরও কিছু গহনা ও কাপড়-চোপড় কিনে তাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওই দিনই কাবিনের ২ লাখ টাকা নগদ নিয়ে নেন সোনিয়া। এরপর শারীরিক সমস্যার কথা বলে বিয়ের পর ব্যবসায়ীর বাসায় না এসে সোনিয়ার তার বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে কানাডায় যাওয়ার টিকিট, ভিসা প্রসেসিংসহ আনুসাঙ্গিক আরও কিছু খরচের কথা বলে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যবসায়ীর কাছে হাতিয়ে নেন এই নারী। এরপর ২৭ মে থেকে সব মোবাইল নম্বর বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের এডিসি বদরুল হাসান বলেন, মূলত বয়স্ক এবং বিত্তশালী পুরুষদের শেষ জীবনের সঞ্চয় টার্গেট করেন সোনিয়া নামে ওই নারী। তিনি মূলত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মিরপুরে মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন। স্বামীর সঙ্গে তার অনেক আগে বিচ্ছেদ হয়। ওই সংসারে এক সন্তানও রয়েছে। অনেক দিন ধরে বিয়ের ফাঁদ পেতে বহু মানুষকে নিঃস্ব করছিলেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post