ওমানে ভারী বর্ষণে এখন পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরো অনেকে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। দেশটিতে চলমান বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যহত হচ্ছে জনজীবন এবং তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।
এমনকি দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে উঠে যাচ্ছে পানি। ওয়াদি অর্থাৎ পাহাড়ি নিম্নাঞ্চলে পানির তীব্র স্রোতে খড় কুটার মত ভাসিয়ে নিচ্ছে নামীদামী সব গাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক বিভীষিকাময় দৃশ্য।
এখন পর্যন্ত দেশটির জালান বু আলী নামক অঞ্চলে পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়া দুই নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ওমানের সিভিল ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স অথরিটি (সিডিএএ)।
বুধবার আরো ৯ জন সহ ৩টি গাড়ি পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যাওয়ার কথা জানিয়েছে সরকারি এই সংস্থা। এরমধ্যে ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো এক জনের কোনো খোঁজ মেলেনি।
ওমানের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশটির এমন পরিস্থিতি আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতির থেকে আরো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং আল হাজর পর্বত সংলগ্ন এলাকা।
এদিকে আজ (২৭ এপ্রিল) দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ১০ নং আবহাওয়া সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, ওমান জুড়ে আজ বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষকরে দক্ষিণ ও উত্তর আশ শারকিয়া, আল উস্তা, ধোফার, আল দাখিলিয়া, আল দাহিরা, উত্তর ও দক্ষিণ আল বাতিনা এবং মাস্কাট প্রদেশে ৩০ থেকে ৭০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় তীব্র ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং বজ্র ঝড়ের সতর্কতা জারী করেছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।
প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় ওয়াদি অর্থাৎ পাহাড়ি নিম্নাঞ্চল পারাপার না হতে এবং নিচু স্থানে যাওয়া থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সেইসাথে শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।
এদিকে, দুই ঋতুর আরব দেশে এখন বাংলাদেশের মত আবহাওয়া এবং ছয় ঋতুর বাংলাদেশে এখন মরু ভূমির চেয়েও বেশি গরম লক্ষ করা যাচ্ছে। আরব দেশে ইদানীং অতি বৃষ্টি এবং মরুভূমিতে বন্যা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ নিয়ে চিন্তিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর বয়স যত বাড়ছে, কেয়ামত ততই নিকটবর্তী হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসের মাধ্যমে আমাদের কাছে কেয়ামতের অনেক নিদর্শনের কথা বর্ণনা করে গেছেন। তারমধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে বা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।
কেয়ামতের আলামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠান্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে করে মাঠঘাট যেমন ফসলহীন হয়ে পড়বে; প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আবার মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘটবে এর উল্টোটা। বন্যার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হবে আরব অঞ্চল। পানির ছোঁয়ায় শুষ্ক মরুভূমি হয়ে যাবে সবুজ অরণ্যে।
সম্প্রতি এই আরব দ্বীপগুলোতেই হচ্ছে ঝড়বৃষ্টি, তীব্র বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তুষারপাত। পানির ছোঁয়ায় বলতে গেলে শুষ্ক মরুভূমি ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে সবুজ অরণ্যে।
অপর দিকে বাংলাদেশের মত ছয় ঋতুর দেশে এখন মরু ভূমির চেয়েও বেশি গরম লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি মাসে বাংলাদেশে উত্তপ্ত গরমে রাস্তার পিচ ঢালাই পর্যন্ত গলে গেছে।
জন্মের পর থেকেই শুনে এসেছি ওমান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বৃষ্টি হয় বছরে একবার কি দুবার। আরব দেশগুলো সাধারণত দুই ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম আর শীত ছাড়া অন্য কোনো ঋতুর কথা চিন্তাই করা যায়না সেখানে।
গরমের সময় মরুভূমির দিকে তাকালে মনে হয় কৃষাণি চুলায় কড়াই চাপিয়ে বালি প্রস্তুত করেছেন, ভেজা চাউলকে মুড়ি বানানোর জন্য। এদেশে সু-জুতা ছাড়া রাস্তায় পা রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় গরমের সময়টায়।
অথচ সেই আরব দেশে ইদানীং অতি বৃষ্টি লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে ওমানে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মরুময় এই দেশে এখন বন্যার খবরও পাওয়া যায়। গত বছর মরুভূমিতে বন্যা অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়। আমাদের অনেক বাংলাদেশি প্রবাসীও মারা যান সেই বন্যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মরুভূমিতে রাতের তাপমাত্রা সাধারণত দিনের তুলনায় অর্ধেকের কাছাকাছিতে নেমে আসে। বাংলাদেশেও রাতের তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এই দেশে গ্রীষ্ম আসার আগেই তীব্র গরম নিয়ে চিন্তিত আবহাওয়াবিদেরা।
এদিকে, আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন নিয়ে কিয়ামত খুব সন্নিকটে বলে মনে করছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। কামরাঙ্গীরচর খাদিমুল ইসলাম মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি মাহমুদুল হক জালীস বলেন, কেয়ামত নিয়ে আলামতে সুগরা ও আলামতে কোবরার কথা বলা হয়েছে।
কেয়ামত হয়তো সন্নিকটে তাই আরবের আবহাওয়ার এতো পরিবর্তন। এসবের মাধ্যমে আরবের মরুভূমি উর্বর হবে, চাষাবাদের উপযুক্ত হয়ে উঠবে, গাছপালায় ভরে যাবে। এসবের মাধ্যমেই হয়তো আমরা কেয়ামতের আরও নিকটে চলে যাচ্ছি।
আপনার মন্তব্য: