দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরলেন মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার কয়ছর আলম, স্বপ্ন ছিলো সৌদি গিয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন আর অসহায় পরিবারের মুখে ফুটাবেন হাসি। কয়ছর আলম উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত রমুজ আলীর ছেলে।
ভাগ্যের পরিবর্তন হলে নিজেদের থাকা কুড়ে ঘর করবেন মেরামত। কিন্তু সব আশায় ধুলোবুলি পড়েছে দালালের খপ্পরে পড়ে। ভালো কাজের কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিলেও সৌদি আরবে নিয়ে কোন কাজ নিয়ে বন্দি অবস্থায় কয়ছর আলমের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে দেশের ফেরার পর ন্যায় বিচার না পেয়ে দালালদের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী কয়ছর আলম। মামলা দায়ের করার পর প্রতারণার দায়ে জুড়ী উপজেলার ভোগতেরা গ্রামের মৃত জহির আলীর ছেলে ইব্রাহিম আলীকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর কয়ছর আলম অন্যের জমিতে কৃষিকাজ এবং বর্গা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্গা চাষের সুবাদে পরিচয় হয় উপজেলার ভোগতেরা গ্রামের মৃত জহির আলীর ছেলে ইব্রাহিম আলীর সাথে। কয়ছর আলমের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ভালো কাজ ও মোটা অংকের বেতনের প্রস্তাব দিয়ে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব দেয় ইব্রাহিম। ইব্রাহিম তার পরিচিত আত্নীয় মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার তারা পাশা গ্রামের মৃত মজিফ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদের মাধ্যমে সৌদি পাঠানোর কথা বলে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নেয়।
ভিসা আসর পর নানা টালবাহানা করে তার কাছ থেকে আরো এক লক্ষ টাকাসহ মোট সাড়ে চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেই এ চক্র। প্রতারনার বিষয়টি দালালের মাধ্যমে বিদেশ পৌঁছার আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে চলে কঠোর গোপনীয়তা। অবশেষে প্রবাসে গিয়ে নানা টালবাহানা দেখে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারে কয়ছর আলম। সৌদি নেওয়ার পর কাজ দিবে তো দূরের কথা উল্টো বন্দি রেখে চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতনের একপর্যায়ে ওই দেশের পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। অবশেষে জেল খেটে চার মাস পর নিঃস্ব উ দেশে ফিরে কয়ছর আলম। নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরার পর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঋণদারদের চাপে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হওয়া কয়ছর আলম বলেন, জুড়ী উপজেলার ভোগতেরা গ্রামের মৃত জহির আলীর ছেলে ইব্রাহিম আলী, ইসলাম উদ্দিন এবং রাজনগর উপজেলার তারা পাশা গ্রামের মৃত মজিফ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদ মিলে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সব খুইয়ে আমি এখন নিঃস্ব। আমি সরকারের কাছে প্রতারকদের সুষ্ঠু বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, স্বল্পশিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিভিন্নধরণের দালালের প্রতারণার শিকার হতে হয়। এর ফলে একদিকে যেমন অভিবাসন ব্যায় বেড়ে যায়, অন্যদিকে অবৈধ পথে অভিবাসনের জন্য মানব পাচারের শিকার হয়ে নির্যাতিত হন অনেকেই। এমতাবস্থায় দালালের প্রলোভনে না পরে জেনে বুঝে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তোফায়েল আহমেদের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post