লক্ষ্মীপুরে এক মা তার শিশুপুত্রকে ভিক্ষুকের কোলে রেখে চলে যান৷ প্রবাসী স্বামী সংসার খরচ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ সন্তান ফিরে পেতে এখন পুলিশের দ্বারস্থ তিনি৷
তবে এখনই সেই মা সন্তানকে ফেরত পাচ্ছেন না বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ৷ কারণ, ওই শিশুকে তার প্রকৃত অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আদালতের মাধ্যমে৷ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটির মা-সহ পরিবারের লোকজন সদর থানায় শিশুপুত্রকে ফিরিয়ে নিতে আসে৷
পুলিশ সুপার জানান, শিশুটির মায়ের আরও তিনটি মেয়ে আছে৷ তার সৌদি প্রবাসী স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায়৷ ওই নারী জেলা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন৷ তিন মেয়েকে সেখানের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন৷
বুধবার দুপুর ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের আধুনিক হাসপাতালের সামনে ‘ওয়াশরুমে যাওয়া’র কথা বলে তার কোলের শিশুকে সালমা বেগম নামে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কোলে রেখে যান এক নারী৷ কিন্তু এরপর তিনি আর ফিরে না এলে ওই বৃদ্ধা স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি পুলিশকে জানান৷
ফুটফুটে শিশুপুত্রকে বৃদ্ধার কাছে রেখে যাওয়ার বিষয়ে ওই নারী বলেন, ‘‘চার সন্তান নিয়ে আমি জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি৷ প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা কিস্তি, সন্তানদের খরচ, সংসারের খরচ লাগে৷ সব মিলিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়৷ মুদি দোকানে অনেক দেনা হয়ে আছে৷ কিন্তু তাদের বাবা কোনো খরচ দেয় না৷ তাই তার উপর জেদ করে এ কাজ করেছি৷”
তিনি বলেন, ‘‘শিশু সন্তানকে ভিক্ষুকের কোলে দিয়ে অন্য সন্তনদেরকে নিয়ে বাপের বাড়ি ভবানীগঞ্জে চলে গিয়েছিলাম৷ ছেলেকে না নিয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন আমাকে বকাঝকা শুরু করে৷
‘‘পরে বুঝতে পেরেছি কাজটি আমি ঠিক করিনি৷ বুকের ধনকে রেখে সারারাত ঘুমাতে পারিনি৷ পরদিন সকাল থেকে তাকে খুঁজতেছি, কোথাও পাইনি৷
‘‘পরে বিকালের দিকে পরিচিত একজন ফেসবুকের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পারে৷ তার মাধ্যমে থানায় আসি৷”
শিশুটির দাদা গণমাধ্যমকে জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তার ছেলের বিয়ে হয়৷ বিয়ের পর ছয় মাস তারা বাড়িতে ছিল৷ তার ছেলে সৌদি আরবে থাকে৷ আর তার পুত্রবধূ নাতি-নাতনিদের নিয়ে জেলা শহরে ভাড়া থাকে৷
তার ছেলে সংসারের খরচ পাঠায় দাবি করে তিনি বলেন, তার ছেলে ছয় মাস আগে দেশ থেকে সৌদি ফিরে যান৷ তার পুত্রবধূ ‘মানসিক সমস্যার কারণে’ নাতিকে ভিক্ষুকের কাছে রেখে চলে গেছে৷ এটা কোনো ‘স্বাভাবিক মানুষের কাজ না’৷
এদিকে বুধবার বিকালে পুলিশ শিশুটিকে ভিক্ষুকের কোল থেকে উদ্ধারের পর স্থানীয় কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন মাহমুদের তত্বাবধানে দেয়৷ কাউন্সিলর তার আত্মীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে লালন-পালনের জন্য রাখেন শিশুটিকে৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করে তার দায়দায়িত্ব সমাজসেবা কার্যালয়কে দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ৷ পরে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই নিঃসন্তান দম্পতি আদালতের কাছে শিশুটিকে লালন-পালনের আবেদন জানালে শর্ত সাপেক্ষে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷
একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আপন করে নেওয়া ওই দম্পতি বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের খোঁজ পাওয়ার পরই শিশুটিকে নিয়ে থানায় যান৷ এ সময় তাদের কাঁদতেও দেখা যায়৷
শিশুটির মা বার বার ওই দম্পতির পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেন এবং তার সন্তানকে ফিরিয়ে নেওয়ার আকুতি জানান৷
জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আদালত থেকে ওই দম্পতিকে লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেও শর্ত ছিল শিশুটির পরিবারকে পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে৷ এখন তার মা এবং পরিবারের খোঁজ মিলেছে৷
‘‘আমরা আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব৷ আইনি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবে তার মা৷ তবে সে সময় পর্যন্ত শিশুটি ওই নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকবে৷”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post