প্রথমবারের মতো ওমানে কাজের জন্য যাচ্ছেন সাইফুদ্দিন। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় তাঁর ফ্লাইট। এ জন্য মঙ্গলবার রাতের বাসে লক্ষ্মীপুর থেকে চাচাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ। এর পর থেকে বিমানবন্দর প্রাঙ্গণেই সময় কাটান চাচা ও ভাতিজা।
সাইফুদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এখানে আশপাশের হোটেলগুলোর ভাড়া অনেক বেশি, নিরাপত্তারও অভাব। তাই এখানেই বসে আছি।’
আপনাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নির্মিত বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা আছে, সেটা কি জানেন? এ কথা শুনে অবাক সাইফুদ্দিন। বললেন, ‘এটা তো প্রথম আপনার মুখেই শুনলাম। এখানে যাঁরা আছেন, কেউ তো বললেন না।’
আপনাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নির্মিত বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা আছে, সেটা কি জানেন? এ কথা শুনে অবাক সাইফুদ্দিন। বললেন, ‘এটা তো প্রথম আপনার মুখেই শুনলাম। এখানে যাঁরা আছেন, কেউ তো বললেন না।’
শুধু সাইফুদ্দিন নন, না জানার কথা জানালেন মালয়েশিয়ায় যাওয়া প্রবাসী নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এখানে কেউই বলেন না যে আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভোর থেকে এখানে অবস্থান করছি। মশার যন্ত্রণায় ঘুমাতেও পারিনি।’
এরপর বিমানবন্দরে অবস্থানরত প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের বেশির ভাগই জানে না যে প্রবাসীদের জন্য সরকারিভাবে স্বল্প খরচে আবাসন সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দিতে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার নির্মিত হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও আশপাশের লোকজনও জানে না সেন্টারের কথা। অথচ সেন্টারটির বয়স ১১ মাস হয়ে গেছে। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ এর উদ্বোধন করা হয়।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা সেন্টার রয়েছে। কিন্তু কোথায় সেটা, জানি না। সম্ভবত আশকোনা রোডে। সেখানে গিয়ে দেখতে পারেন।’
শামীমের কথা অনুযায়ী চলে যাই এয়ারপোর্ট বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে অবস্থিত আশকোনা রোডে। প্রায় আধাঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর এক রিকশাচালক বলেন, ‘এটা তো খিলক্ষেতের লঞ্জনীপাড়ায়।’ তাঁর রিকশায় বসে চলে যাই সেখানে। ভাড়া নেন ৬০ টাকা।
প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার বিমানবন্দর থেকে ৬.৫ কিলোমিটার দূরে খিলক্ষেতের বরুয়া লঞ্জনীপাড়ায় অবস্থিত। ১৪০ কাঠা জমির ওপর নির্মিত এই সেন্টারে ৪০ জন পুরুষ ও ৯ জন নারীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেন্টারে প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর সর্বোচ্চ দুই রাত অবস্থান করতে পারেন।
এ জন্য প্রথমে ১০০ টাকা ফি দিয়ে সরাসরি বা অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ঠিকানা http://bwec.wewb.gov.bd/wewb-centre/booking/search । প্রতি দিনের সিট ভাড়া ২০০ টাকা। এই টাকায় অবশ্য খাবারের ব্যবস্থা নেই। এক দিনে খাবারের জন্য খরচ করতে হয় আরো ৩৫০ টাকা। সেই খাবারও সেন্টারের নিজস্ব ক্যান্টিনের নয়। পাশের হোটেল থেকে খাবারটি আনা হয়।
সেন্টারে থাকার জন্য লাগবে পাসপোর্ট ও এয়ার টিকিটের কপি, বহির্গমন ছাড়পত্রসহ সংশ্লিষ্ট কাগজ। সেন্টারটিতে শুধু প্রবাসীরাই থাকতে পারবেন, তাঁদের আত্মীয়-স্বজনরা নয়। সেন্টারের সেফ লকারে লাগেজসহ মূল্যবান মালামাল সংরক্ষণ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা আছে। থাকার পাশাপাশি প্রবাসীরা সেন্টার থেকে বিমানবন্দরে বা বিমানবন্দর থেকে সেন্টারে যাওয়ার জন্য পরিবহন সুবিধা পাবেন। এ জন্য আলাদা কোনো খরচ নেই।
নিরিবিলি সবুজ পরিবেশে প্রাচীরঘেরা বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার দেখতে অনেকটা রিসোর্টের মতো। সেখানে একটি দ্বিতল ভবনের নিচতলায় প্রবাসী কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেন্টারের সামনে বসে গল্প করার জন্য রয়েছে সবুজ মাঠ, যার চারপাশে রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রজাতির অসংখ্য ফল ও ফুলের গাছ।
সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসীদের থাকার জন্য তৈরি ১১টি রুমের মধ্যে ১০টিই ফাঁকা। একটি রুমে চারজন প্রবাসীকে পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে একজন ইয়ামীম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগেও একবার এসেছি। এখন তো দু-একজনকে পাওয়া গেছে। প্রথমবার তো কাউকেই পাইনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯২ জন প্রবাসী এই সেন্টারে অবস্থান করেছেন। তবে সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের দুই মাস পর তাঁরা এটি চালু করতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক নাজমুল হক বলেন, ‘অনলাইন ও গণমাধ্যমের কল্যাণে কিছুটা প্রচার পেয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি। আমাদের লিফলেট ও স্টিকার জেলা ও উপজেলায় সব সরকারি অফিসে লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে সেন্টার পর্যন্ত নির্দেশিকা লাগানো হবে।’
তবে উদ্যোগটি সফল করতে হলে এর প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানান ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে প্রচারণার অভাবে সব সময় এটি খালি থাকছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এর প্রচারণা বৃদ্ধি করতে পারলে এটি প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক অনন্য জায়গা হিসেবে তৈরি হবে।’
যোগাযোগ করবেন যেভাবে : বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে থাকার জন্য বুকিংসহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে ০১৩১০৩৫০৫৫৫ ও ০১৭৫৪৭১৫৭২০ নম্বরে। সেন্টারে যাওয়ার জন্য নামতে হবে বিমানবন্দর স্টেশনের পাশের কাওলা বাসস্ট্যান্ডে। এরপর রাস্তার পূর্ব পাশ থেকে রিকশা বা অটোরিকশা ভাড়া করে নিয়ে যেতে হবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post