সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সৌদিআরব সম্মতি প্রকাশ করেছে। রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সাথে ফোনে আলাপকালে সৌদিআরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।
কোয়ারেন্টাইন সুবিধার নিশ্চিত করতে সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে দেশে আনা হবে। তবে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে আটকে পড়া উমরাহ হজ্জ পালনকারী, সেদেশে অধ্যয়নরত ছাত্র এবং মহিলা গৃহকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এসময় সৌদিআরবকে বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস আমদানির আহবান জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও সৌদিআরবের যৌথ প্রকল্প স্থাপন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে উন্নত সবজি পিপিই আমদানির সুযোগ আছে বলেও জানান ড. মোমেন। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সৌদিআরবের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য চাষে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকদের কাজে লাগাতে অনেুরোধ করলেন ড. মোমেন।
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদনে সৌদিআরবের কোম্পানি সেদেশের বাইরে অন্য দেশেও বাংলাদেশের দক্ষ কৃষি শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সৌদিআরবে অন্যখাতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কৃষিখাতে কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন ড. মোমেন। তাছাড়া বিপুল সংখ্যক তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ বাংলাদেশিদের সৌদিআরব কাজে লাগাতে পারবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক এবং তথ্য প্রযুক্তিখাতে দক্ষদের কাজে লাগানোর বিষয়ে ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ উৎসাহ প্রকাশ করেন।
ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর ওপর করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ, অর্থনীতি পূনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষা এবং COVID-19 Response and Recovery Fund গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বিশেষ ভার্চুয়াল সভা আয়োজনের বিষয়ে সৌদিআরবের সহায়তা চান ড. মোমেন। এ সভা আয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন সৌদিআরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মহীন হলে তাদের প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে COVID-19 Response and Recovery Fund অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে এসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রেও সৌদিআরবের সহযোগিতা চান ড. মোমেন। এ বিষয়ে সৌদি আরবের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। এসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে সৌদিআরবের অব্যাহত সাহায্যের জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তাছাড়া সৌদিআরবে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক সহযোগিতার জন্যও সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ দেন ড. মোমেন।
এদিকে আগামী ২০ জুন (সম্ভাব্য তারিখ) সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ও ১ জুলাই পর্যন্ত জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের দুটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস। এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদিআরবে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। অনেকেই জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে দেশে ফিরতে চান। অনেক অসুস্থ প্রবাসী রয়েছেন। এখানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক ছাত্র দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে ভিজিট ভিসায় এসে দেশে ফিরে যেতে পারছে না। আমরা সবার কথা ভেবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চাকরি শেষে ফাইনাল এক্সিট ভিসা নিয়ে দেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার একটি রিয়াদ থেকে ও আরেকটি জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। রেজিস্ট্রেশনকারীদের (রেজিস্ট্রেশন লিংক: https://bit.ly/2Yx6Hhc এছাড়া দূতাবাসের ওয়েবসাইট এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে) দূতাবাসের পক্ষ থেকে ফোন করে রিয়াদের জন্য ৪০০ জন ও জেদ্দার জন্য ৪০০ জন প্রবাসীকে টিকিট ক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যদের ক্রমানুসারে ফোন করা হবে।
বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রিয়াদ-ঢাকা একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ইকোনোমিক ক্লাস ২৮০০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৩৮০০ সৌদি রিয়াল নির্ধারণ করেছে। জেদ্দা-ঢাকা বিমানের একমুখী যাত্রার টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ইকোনোমি ক্লাসের জন্য ৩০৩০ সৌদি রিয়াল ও বিজনেস ক্লাস ৪০৩০ সৌদি রিয়াল।
আরও পড়ুনঃ বাজেটে প্রবাসীদের সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের দাবি
এদিকে করোনায় আক্রান্ত নন বা কোনো উপসর্গ নেই এ মর্মে সৌদি কর্তৃপক্ষ-কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট বিমানে প্রবেশের পূর্বে প্রত্যেক যাত্রীকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ঢাকায় অবতরণের পর বিমান বন্দরে তা জমা দিতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কিত সকল সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-বিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
আরও দেখুনঃ সুলতান কাবুসের সেই রহস্যময় চিঠিতে কি লেখা ছিল?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post