ধূমপান মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দেশে কঠোর আইনের বিকল্প নেই। বৃহস্পতিবার (২১ জলাই) রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এমন মন্তব্য করেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ ধূমপানে আসক্ত। ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপান মুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। করোনায় গত দুই বছরে এখনও ৩০ হাজার মারা যায়নি, অথচ ধূমপানের কারণে প্রতিবছর ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।
আমরা সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলায় কাজ করেছি এবং এখনও করছি অথচ দেড় লাখের অধিক মানুষকে বাঁচানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছি না। বরং উল্টো দিকে যাচ্ছে। একাধিক সরকারি ঊর্ধ্বতন আমলা ব্রিটিশ টোব্যাকো বোর্ড অব ডিরেক্টরিতে আছেন।
সিগারেট কোম্পানির সিএসআর বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেওয়া লোক একজন জর্দা ব্যবসায়ী। প্রতিবছর এনবিআর এ তথ্য করে প্রকাশ করে। তাদের হাতে ফুল তুলে দেন। এর থেকে বড় সিএসআর আর কি হতে পারে। এ অবস্থায় ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপান মুক্ত করতে কঠোর আইনের বিকল্প নেই।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পক্ষে ব্যাপক জনমত থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহল এটি চূড়ান্ত করার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। তাই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সকল অংশীজনকে সর্বাত্মক সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান এই সাংবাদিক নেতা।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে উন্নয়ন সমন্বয় ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন শক্তিশালীকরণের যে খসড়া প্রস্তাবটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে তাতে তামাক-বিরোধী অংশীজনদের দাবি ও পরামর্শগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন তা বাস্তবায়নে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই খসড়া সংশোধনীটি চূড়ান্ত করা দরকার।
ড. আতিউর আরও বলেন, তামাক-বিরোধী সংগঠন ও গবেষকরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিল। তার সবগুলোই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া সংশোধনীতে উঠে এসেছে। এ কারণেই জনসাধারণের মতামতের জন্য খসড়া সংশোধনীটি উন্মুক্ত করার পর এটি ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। খসড়া সংশোধনীর পক্ষে ১৫৫ জন জাতীয় সংসদ সদস্য সমর্থন জানিয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), সন্ধানীসহ ২০টির বেশি চিকিৎসক সংগঠন, শতাধিক স্বনামধন্য চিকিৎসক, শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের সংগঠন, ধর্মীয় নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সংগঠন, রেস্টুরেন্ট অনার্স অ্যাসোসিয়েশন এতে সমর্থন জানিয়েছে। সমর্থন করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বমোট ২০ হাজারের বেশি সংগঠন। এমনকি বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলোও ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সংশোধনীটির প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর সিগারেট প্যাকেটের ৯০ শতাংশ জুড়ে সচিত্র বার্তা প্রকাশ, খুচরা বিক্রয় বন্ধসহ খসড়া প্রস্তাবে উঠে আসা দাবিগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটা আমাদেরও দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তামাক প্রতিরোধে কঠোর আইন করা জরুরি কিন্তু তা বাস্তবায়নের মতো সক্ষমতাও থাকতে হবে।
ধূমপান থেকে বিরত রাখতে মানুষকে সম্পূর্ণভাবে বাধ্য করে কঠিন, তাদের মোটিভেট করতে হবে। তাই সচেতনতা দরকার। আমরা ধূমপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। সমস্যা হলো করোনা বা রোগ মৃত্যুগুলো মানুষের কাছে দৃশ্যমান ধূমপানের ক্ষতিটা নয়৷ তাই মানুষকে সচেতন করতে এই বিষয়টিকে দৃশ্যমান করতে হবে।’
এসময় তিনি তামাকমুক্ত দেশ গঠনের জন্য বর্তমান সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন। সংসদ সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রস্তাবিত আইনটি চূড়ান্ত করা এবং তার বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন বলেও জানান শহীদুজ্জামান সরকার।
বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দেশ তামাক মুক্ত হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের আশায় বসে থাকলে লক্ষ্য পূরণ হবে না। ধূমপান বন্ধে ক্যাম্পেইন করতে হবে, মানুষকে এর বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনের আমিসহ চিকিৎসকরা ক্যাম্পেইনে অংশ গ্রহণ করবো।
এ সময় উত্তরাঞ্চলে তামাকের অধিক চাষ হয় জানিয়ে এটি বন্ধে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে কঠোর আইন পাসের পাশাপাশি বাস্তবায়নেও উদ্যোগী হতে বলেন চিকিৎসকদের অভিভাবক সংগঠন বিএমএর সভাপতি।
আরো পড়ুন:
নতুন নতুন শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে: ইমরান আহমদ
ওমানের সালালায় ফের সড়ক দুর্ঘটনা, চালকদের সর্তক থাকার নির্দেশ
পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি, মালয়েশিয়ায় ৫ দালাল আটক
গোপনে মক্কায় গেলেন ইসরাইলি সাংবাদিক
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ঝুলন্ত ও কনস্টেবলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post