দক্ষিণ ভারতের কেরালার রাজধানী থিরুভানান্থাপুরামের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর, থিরুভানান্থাপুরাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সোমবার এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ নয়, বরং একটি হিন্দু মন্দিরের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার জন্য কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল উড়োজাহাজের ওঠানামা। রথটি বিমানবন্দরের রানওয়ের ওপর দিয়েই এগিয়ে গিয়েছিল।
কেরালার শতবর্ষী প্রাচীন উৎসব পাইনকুনি তামিল ক্যালেন্ডারের ‘পাইনকুনি’ মাসে (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে মার্চ-এপ্রিল) দশ দিন ধরে পালিত হয়। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচিত। উৎসবের শেষ দিনের মূল আকর্ষণ হলো রথযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডবের বিশাল আকারের (কমপক্ষে ৩০ ফুট উঁচু) কুশপুত্তলিকা রথে চাপিয়ে শঙ্খুমুগম সমুদ্র সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেবমূর্তিগুলোর ‘পবিত্র স্নান’ করানো হয়। রাজপরিবারের সদস্য, পুরোহিত, বিশেষ ভক্ত এবং হাতিরাও এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৩২ সালে বিমানবন্দরটি তৈরির বহু বছর আগে থেকেই এই পথেই রথটি সৈকতে যেত এবং ঐতিহ্য বজায় রেখে সেই পথ আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি বছর উৎসবের সময় মন্দিরের এই পথটি বিমানবন্দরের রানওয়েতে পরিণত হয়।
এই রথযাত্রার পৃষ্ঠপোষক ছিল সেই রাজপরিবার, যারা একসময় বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও পরবর্তীতে বিমানবন্দরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং বর্তমানে আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড এটি পরিচালনা করে। বিশ্বে ধর্মীয় কারণে বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ থাকার ঘটনা বিরল। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ইসরায়েলে এর কিছু উদাহরণ দেখা যায়। বালিতে হিন্দু নববর্ষ এবং ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ‘ইয়োম কিপুর’-এর মতো পবিত্র দিনে সরকারি ছুটির কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকে।
তবে কেরালার চিত্র ভিন্ন। এখানে নিরাপত্তা-বেষ্টিত রানওয়ের মধ্য দিয়েই পূজার শোভাযাত্রা যায়, যা বিশ্বজুড়ে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। শোভাযাত্রার সময় আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় টার্মিনালই সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে এ বিষয়ে এয়ারলাইনসগুলোকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। বিমানবন্দরের চিফ এয়ারপোর্ট অফিসার রাহুল ভাটকোটি বিবিসিকে জানান, ঐতিহাসিক শোভাযাত্রাকে বিমানবন্দরে সম্মান জানানো তাদের জন্য সৌভাগ্যের ও গর্বের বিষয় এবং এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই।
রথযাত্রার সময় কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়। কেবল রাজপরিবারের সদস্য, পুরোহিত, কর্তৃপক্ষ ও নির্দিষ্ট কিছু ভক্ত বিশেষ পাস ও নিরাপত্তা ছাড়পত্রের মাধ্যমে এতে অংশ নিতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়াটি কঠোর নজরদারির মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। বিমানবন্দরের কমিউনিকেশন ম্যানেজার মাহেশ বালাচন্দ্রন জানান, পুরো রানওয়ে ‘সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স’ ঘিরে রাখে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। শোভাযাত্রা শেষে রানওয়ে সম্পূর্ণরূপে পরিদর্শন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, এই বিমানবন্দর প্রতিদিন প্রায় ৯০টি ফ্লাইটের অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করে। চলতি বছর পাইনকুনি উৎসব ২ এপ্রিল শুরু হয়ে গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) শেষ হয়েছে।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
