ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বৈরথের সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে মার্কিন উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক সংস্থা বোয়িংয়ের ওপর। ব্লুমবার্গের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার দেশটির বিমান সংস্থাগুলোকে বোয়িংয়ের কাছ থেকে নতুন বিমান ক্রয় না করার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বোয়িং নির্মিত বিমানের যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও চীন বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেইজিংয়ের এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন বিমান নির্মাণকারী এই জায়ান্ট কোম্পানিটিকে কার্যত চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জিনপিং সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে বোয়িংয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের এয়ারবাস এবং চীনের নিজস্ব বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফ্ট করপোরেশন অব চায়না’ (কোম্যাক) উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বোয়িংয়ের বর্তমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে চীনা সংস্থাগুলোকে মার্কিন এই বিমান সংস্থার তৈরি বিমান ভাড়া নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে জিনপিং সরকার। প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছে, চীনের শীর্ষস্থানীয় তিনটি বিমান সংস্থা—এয়ার চায়না, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস এবং চায়না সাদার্ন এয়ারলাইনস ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে যথাক্রমে ৪৫টি, ৫৩টি ও ৮১টি বোয়িং বিমান কেনার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু জিনপিং সরকারের নতুন নির্দেশ সেই পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২ এপ্রিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ওপর বিভিন্ন মাত্রায় পালটা শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর ফলে আমেরিকায় অবস্থিত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আমদানি করা পণ্যের দাম বহু গুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকেই চীনে তাদের পণ্য উৎপাদন করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রথমবার চীনের সব ধরনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক ধার্য করেন, যা পরে ২ এপ্রিল বাড়িয়ে ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও তার পরের দিন মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। চীনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প ৮ এপ্রিলের মধ্যে এই শুল্ক প্রত্যাহার না করলে চীনা পণ্যের ওপর রপ্তানি শুল্ক আরও ৫০ শতাংশ বাড়ানোর এবং ৯ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর করার হুমকি দেন।
এমন পরিস্থিতিতে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করে। বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপের পর বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় চীনের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক বৃদ্ধি করে ১৪৫ শতাংশে নিয়ে যান ট্রাম্প। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সাম্প্রতিককালে এই বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে চীন আমেরিকায় চুম্বক ও বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন চীনা বন্দর থেকে চুম্বকের চালান পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন। চীনের এই নতুন পদক্ষেপে আমেরিকা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে, কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য এই খনিজ ও চুম্বক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
